চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১

মানবীর চোখে ধরা পড়ে শূন্যতার করুণ রূপ

সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল ‘কনট্রিভান্স’-এর সম্মেলক প্রদর্শনী। দেখে এসে লিখছেন মৃণাল ঘোষ।শিল্পীদের সম্মিলিত সংগঠন ‘কনট্রিভান্স’ তাঁদের সমবেত শিল্প প্রয়াস ও অভিযাত্রার ৩৫ বছর পূর্ণ করল। ১৯৭৯-র এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাঁদের প্রথম সম্মেলক। তারপর থেকে তাঁরা নিয়মিত প্রদর্শনী করে আসছেন। শুধু প্রদর্শনীতেই সীমাবদ্ধ নয় তাঁদের কর্মপ্রয়াস। নিয়মিত ওয়র্কশপ করেন তাঁরা। নানা প্রকরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় সেখানে। একটি পত্রিকাও প্রকাশ করে থাকেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৫ ০১:০০

শিল্পীদের সম্মিলিত সংগঠন ‘কনট্রিভান্স’ তাঁদের সমবেত শিল্প প্রয়াস ও অভিযাত্রার ৩৫ বছর পূর্ণ করল। ১৯৭৯-র এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাঁদের প্রথম সম্মেলক। তারপর থেকে তাঁরা নিয়মিত প্রদর্শনী করে আসছেন। শুধু প্রদর্শনীতেই সীমাবদ্ধ নয় তাঁদের কর্মপ্রয়াস। নিয়মিত ওয়র্কশপ করেন তাঁরা। নানা প্রকরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় সেখানে। একটি পত্রিকাও প্রকাশ করে থাকেন।

১৯৭৯-তে যখন গড়ে উঠেছিল এই গ্রুপ, তখন সংঘবদ্ধতার প্রয়োজন ছিল প্রত্যেক শিল্পীর সীমিত সাধ্যে নিয়মিত প্রদর্শনী করা বা জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশের জন্য। শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না তেমন। বিপণনের পরিমণ্ডল ছিল না। অবস্থাটা এখনও তেমন কিছু পাল্টায় নি।

Advertisement

বরং প্রতিযোগিতা আরও বেড়েছে। ফলে সংঘবদ্ধতাকে আরও নিবিড় করতে চাইছেন তাঁরা। ৩৫-বছর পূর্তিতে একটি বিশেষ প্রকল্প তাঁরা নিয়েছেন। কর্মপ্রয়াসকে সারা ভারতে বিস্তৃত করতে চেয়েছেন। সম্মেলক প্রদর্শনী করেছেন গোয়া, বেঙ্গালুরু ও মুম্বইতে। এবং শেষে নিজেদের শহর কলকাতায়। অ্যাকাডেমিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল সেই প্রদর্শনী। অংশ নিয়েছেন ১৬ জন শিল্পী। এর মধ্যে তিনজন ভাস্কর।

সকলের কাজে আঙ্গিকগত কোনও ঐক্য ছিল না। সেটা না থাকাই স্বাভাবিক। প্রকাশভঙ্গির বৈচিত্রই প্রদর্শনীর মূল সুর। ঐতিহ্যগত নব্য-ভারতীয় ধারার আঙ্গিকে কাজ করেছেন অনেকে।

আধুনিকতাবাদী প্রতিবাদী-প্রতিমাও হয়েছে অনেকের প্রকাশের ভাষা। ভিন্নধর্মী পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়াসও কিছু ছিল। সকলের কাজ যে সমান শিল্পোত্তীর্ণ বা উজ্জ্বল হতে পেরেছে, তা বলা যায় না। ফলে একটু আগোছালো ও অপরিকল্পিতই মনে হয়েছে প্রদর্শনীটিকে।

ভাস্করদের মধ্যে নির্মল কুমার মল্লিকের কাজ প্রথাবিরোধী। পরীক্ষামূলক। ‘স্টেপস অব জয়’ শীর্ষক ব্রোঞ্জে আলুলায়িত ভাবে সিঁড়ি উঠে গেছে। শীর্ষবিন্দু থেকে লাফিয়ে নামছে এক মানব প্রতিমা। জ্যামিতিক বিন্যাস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন অন্য কাজে।

প্রদীপ শুরের ব্রোঞ্জ ও মিশ্রমাধ্যমের রচনায় শীর্ণ, দীর্ঘায়ত যে মানব বা মানবী-প্রতিমা, তাতে শূন্যতাদীর্ণ অভিব্যক্তির প্রকাশ। তরুণ ভাস্কর স্বরূপ নন্দী সিরামিকসে কাজ করেছেন মানুষের মুখ নিয়ে অভিব্যক্তিবাদী রীতিতে।

স্বপন দেনরা কোলাজ মাধ্যম নিয়ে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন দীর্ঘদিন। এবারের প্রদর্শনীতেও ছিল তাঁর সফল কিছু কোলাজ। ঐতিহ্যগত দেশীয় আঙ্গিকে কাজ করেছেন অনেক শিল্পী। প্রবীণ শিল্পী মহী পাল এই দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন শুরু থেকে। ভারতীয় রীতিতে কাজ করেছেন এবার। কিন্তু তেমন উত্তরণ ঘটাতে পারেননি। এই রীতিরই প্রসারিত রূপ অনিমেষ বিশ্বাসের ছবিতে।

ভিন্ন ধরনের রোম্যান্টিক অভিব্যক্তি রয়েছে ‘মুন লাইট ড্রিম’ বা ‘দ্য নিউ মুন’ শীর্ষক তেলরঙের ক্যানভাসে। বিকাশ মুখোপাধ্যায়ের ‘জায়েন্ট স্টেপস অ্যান্ড রাউন্ড স্কাই’ ঐতিহ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্য আধুনিকতার সুষম সমন্বয়ের প্রকাশ।

দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের ছবির কল্পরূপাত্মক প্রকাশভঙ্গিও এরকম সমন্বয়েরই ফসল। ‘প্লেইং ইন ক্লাউড’ শীর্ষক অ্যাক্রিলিকে মেঘলোকে প্রেমের খেলায় মগ্ন দুই মানব-মানবী। বাইরের বাস্তব নয়, চেতনার অন্তর্লীন বাস্তবকে রূপ দিতে চান তিনি। মলয় দত্তের ‘অন সার্চ অব পিস’ শীর্ষক ছবিতে দুর্গা ও যিশুর রূপায়ণ। প্রচলিত রূপরীতির বাইরে নতুন কোনও পরিসর তৈরি করতে পারেন নি তিনি।

ঐতিহ্যগত আঙ্গিক নিয়ে কাজ করেছেন নৃপেন নাথও। ‘লাভ’ ছবিতে এক স্বপ্নিল নারী। সুদীপ সাহার ‘শিব’ ছবিটিতে জ্যামিতিক বিন্যাস ঘটেছে। তনুশ্রী ঘোষের পুরাণকল্পমূলক ছবিটি দক্ষতায় সঞ্জীবিত।

পাশ্চাত্য অভিব্যক্তি ভেঙেছেন সুশান্ত রায়। শ্রীমন্ত দাসের ছবি প্রতিবাদী দৃষ্টান্ত।

যেমন করেছেন জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়। অজয় দাস নিস্বর্গ এঁকেছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement