মতান্তর পৌঁছয়নি মনান্তরে

১৯৩৮-এ প্রকাশিত বইটির ভূমিকায় এ কথা লিখেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ০০:১৮

বঙ্কিম-পরিচয় সঙ্কলক: অমরেন্দ্রনাথ রায় ৩৫০.০০, সূত্রধর

বঙ্কিমচন্দ্রের ‘‘শততম বার্ষিকী উপলক্ষে বাঙ্গালার ছাত্র-সম্প্রদায়কে উপহার দিবার উদ্দেশ্যেই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে আজ এই ‘বঙ্কিম-পরিচয়’ প্রকাশিত হইল। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা-সমুদ্র মন্থন করিয়া ছাত্রগণের পাঠোপযোগী বচনামৃত ইহাতে সংগৃহীত হইয়াছে।’’ ১৯৩৮-এ প্রকাশিত বইটির ভূমিকায় এ কথা লিখেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এ বার বঙ্কিমচন্দ্রের ১৮২তম জন্মদিনে দুর্লভ বইটির হুবহু প্রতিলিপি সংস্করণ প্রকাশিত হল। ‘বাঙ্গালীর উদ্দেশে, বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, ধর্ম্ম ও সমাজ, নানা কথা, বর্ণনা’ এই ক’টি অংশে ২৭৩টি রচনাংশ সজ্জিত। সমগ্র বঙ্কিম রচনাবলি পড়ে ওঠার আগ্রহ, সময় ও ধৈর্য ছাত্রছাত্রীদের কতটা ছিল বা আছে সন্দেহ, কিন্তু এই বই নেড়েচেড়ে দেখলে বঙ্কিমের স্বচ্ছ ভাবনাচিন্তার যে প্রতিফলন নজরে পড়ে তাতে আজকের পাঠকও দু’একটি মূল লেখা খুঁজে দেখতে আগ্রহী হবেন এ কথা বলাই যায়। বঙ্কিমের নানা মন্তব্য আজও ভাবিয়ে তোলে। দু’একটি উল্লেখ করা যাক— ‘বাঙ্গালী গুণের অনুকরণে তত পটু নহে, দোষের অনুকরণে ভূমণ্ডলে অদ্বিতীয়।’ ‘একটু বকাবকি লেখালেখি কম করিয়া কিছু কাজে মন দাও— তোমাদের শ্রীবৃদ্ধি হইবে।’ ‘এ দেশে অন্ধ অন্ধকে পথ দেখাইতেছে; ভ্রান্ত ভ্রান্তকে উপদেশ দিতেছে।’ সঙ্কলনের শুরুতে আছে জীবনকথা, শেষে তাঁর জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সমকালীন ঘটনাবলি, এবং ১৩২২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্র সম্পর্কে সাময়িকপত্রে প্রকাশিত প্রবন্ধের নির্বাচিত তালিকা।

Advertisement

রামমোহন, দেবেন্দ্রনাথ, কেশবচন্দ্র ও অন্যান্য ব্যক্তিত্ব
শিবনাথ শাস্ত্রী
৩০০.০০, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ

‘‘Biography পড়া আমার ঘোর বাতিক। মানুষের জীবনচরিত পড়িতে আমার যত ভালো লাগে এমন আর কিছু ভালো লাগে না।’’ দিনলিপিতে এ মন্তব্য শিবনাথ শাস্ত্রীর (১৮৪৭-১৯১৯)। আবার জীবনচরিত রচনাও তাঁর অত্যন্ত আগ্রহের বিষয় ছিল। যেমন রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ বইটিতে তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবনচরিত রচনা করতে গিয়ে আরও ৩৬ জন বাঙালির ‘সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত’ যোগ করেছেন। সুপরিচিত এই বইটি ছাড়াও নানা ভাষণে, সাময়িকপত্রের রচনায় তিনি ধরে রেখেছেন আরও বহু ব্যক্তিত্বকে। এই বইটি তেমনই অনেকগুলি জীবনীর সমাহার। ১৮৮৬তে প্রকাশিত হয় রামমোহন বইটি। আবার ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের মাঘোৎসবে দেওয়া বক্তৃতা থেকে সঙ্কলিত হয় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র পুস্তিকাটি। ব্রাহ্মসমাজে ভাঙনের ফলে শিবনাথ স্থিতি পান সাধারণ ব্রাহ্মসমাজে, দেবেন্দ্রনাথের আদি সমাজ ও কেশবচন্দ্রের নববিধান— এ দু’য়ের মাঝখানে। কিন্তু মতপার্থক্য তাঁদের মধ্যেকার সম্পর্কে কোনও মালিন্যের ছাপ পড়তে দেয়নি। শিবনাথের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ‘স্বচ্ছ ও ব্যাপকভাবে প্রসারিত’, লিখেছেন গৌতম নিয়োগী, আলোচ্য সঙ্কলনের ‘প্রাসঙ্গিক’ তথ্যে। এ ছাড়া ‘স্বনামা পুরুষ’ বইয়ে শিবনাথ আলোচনা করেছেন কৃষ্ণদাস পাল, নবীনচন্দ্র রায়, রঙ্গনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু, জামশেদজি টাটা, ম্যাক্সমুলার প্রমুখের কথা। আর ‘পরিশিষ্ট’ অংশে যুক্ত হয়েছে মেন আই হ্যাভ সিন বইটির মায়া রায় কৃত অনুবাদ, সেখানে পাই বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ণ বসু, শ্রীরামকৃষ্ণ, মহেন্দ্রলাল সরকার, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের কথাও।

হরু ঠাকুর
সম্পাদক: শ্রুত্যানন্দ ডাকুয়া
২২০.০০, খোয়াবনামা

বাংলা কবিগানের সূচনা রাসু নৃসিংহ, গোঁজলা গুঁই, রঘুনাথ দাস প্রমুখের হাতে। এই রঘুনাথ দাস কবিওয়ালার কাছেই হরু ঠাকুরের কবিগানে দীক্ষা। আসল নাম হরেকৃষ্ণ দীর্ঘাড়ি (বা দীর্ঘাঙ্গী), বাস ছিল কলকাতার সিমলায়, বাবা কল্যাণচন্দ্র (মতান্তরে কালীচন্দ্র)। জন্ম আনুমানিক ১৭৪৯, মৃত্যু ১৮২৪। হরেকৃষ্ণ ছিলেন বৈদিক ব্রাহ্মণ, তাই তাঁর হরু ‘ঠাকুর’ নামে প্রসিদ্ধি। ছোটবেলায় পড়াশোনা বিশেষ না হলেও পরে তিনি যে ভক্তিরসের গান রচনা করেন সেখানে তাঁর তত্ত্বজ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের পরিচয় মেলে। ঈশ্বর গুপ্তের মতে, ‘‘প্রধান প্রধান অধ্যাপক মহাশয়েরা তাঁহাকে অধ্যাপক শ্রেণীর মধ্যে গ্রাহ্য করিতেন।’’ কিন্তু তাঁর মৃত্যুর মাত্র তিন দশক পরে কবিওয়ালাদের জীবনী ও গান সংগ্রহ করতে গিয়ে ঈশ্বর গুপ্ত হরু ঠাকুর সম্পর্কে খুব সামান্য তথ্য ও ৪৫টি গান উদ্ধার করতে পেরেছিলেন, তাও সব পুরো গান নয়। মহারাজ নবকৃষ্ণ তাঁর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, তাঁর কথাতেই হরু ঠাকুর পেশাদার কবির দল গড়েন, আর তাঁর মৃত্যুর পর সে দল ভেঙে দেন। ঠনঠনের রামশঙ্কর ঘোষের বাড়িতেও তিনি বহু বার কবিগানের আসরে যোগ দেন। ভোলা ময়রা তাঁর প্রধান শিষ্য, ভবানী বেনে ও নীলু রামপ্রসাদও তাঁর দলেই ছিলেন, পরে সকলেই নতুন দল গড়েন। গত দেড়শো বছরে হরু ঠাকুর সম্পর্কে খুব নতুন কিছু আর জানা যায়নি। এ বার হরুর যাবতীয় গান, তাঁর সম্পর্কে ঈশ্বর গুপ্ত থেকে গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সুশীল দে প্রফুল্লচন্দ্র পাল ভবতোষ দত্ত নিরঞ্জন চক্রবর্তী অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনা, এবং শেষে শ্রীঅরবিন্দ-কৃত হরুর সাতটি গানের ইংরেজি অনুবাদ একত্রে গ্রন্থিত হল।

আরও পড়ুন
Advertisement