পুস্তক পরিচয় ২

খণ্ডিত ইতিহাসের সূত্র

উস্তাদ আমজাদ আলি খানের তখনও সুযোগ হয়ে ওঠেনি এম এস শুভলক্ষ্মীর সঙ্গীত শোনার, তাঁর নাম শুনছেন সেই ছোটবেলা থেকে। গাড়ি চালাচ্ছেন এক দিন, রেডিয়োতে প্রমীলা-কণ্ঠে দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০০:০০

মাস্টার অন মাস্টার্স

লেখক: আমজাদ আলি খান

Advertisement

মূল্য: ৪৯৯.০০

প্রকাশক: পেঙ্গুইন ভাইকিং

উস্তাদ আমজাদ আলি খানের তখনও সুযোগ হয়ে ওঠেনি এম এস শুভলক্ষ্মীর সঙ্গীত শোনার, তাঁর নাম শুনছেন সেই ছোটবেলা থেকে। গাড়ি চালাচ্ছেন এক দিন, রেডিয়োতে প্রমীলা-কণ্ঠে দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। বিস্মিত খানসাহেবের মনে হতে থাকে: শুভলক্ষ্মী নন তো? গাড়ি আর চালাতে পারলেন না, কারণ সে কণ্ঠ এতটাই ‘স্পিরিচুয়াল অ্যান্ড অ্যাপিলিং’... গাড়ি দাঁড় করিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনার শেষে রেডিয়োতে ঘোষণা হল: শিল্পী এম এস শুভলক্ষ্মী। কেবল স্মৃতির অনুষঙ্গই নয়, শুভলক্ষ্মীর গায়নশৈলীর অনুপুঙ্খের কথাও উঠে এসেছে আমজাদের লেখনীতে। এ ভাবেই লিখে গিয়েছেন আরও এগারো জন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীকে নিয়ে... কেশরবাঈ কেরকর, বড়ে গুলাম আলি খান, আমির খান, বেগম আখতার, বিসমিল্লা খান, আল্লা রাখা, রবিশঙ্কর, ভীমসেন জোশী, কিষাণ মহারাজ, কুমার গন্ধর্ব, বিলায়েত খান। শব্দ দিয়ে আঁকা প্রতিভার সমাহার যেন এ-বই, যাতে মিশে থাকে আমজাদের মতো এক শিল্পীর গূঢ় এষণা, শিল্প আস্বাদনের সহৃদয় উত্তাপ। দীর্ঘ এক ভূমিকায় ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের শিল্পবীজ, দক্ষিণ ও উত্তরের শিল্পরীতির তফাত, তথ্যে ও তত্ত্বে, প্রাঞ্জল অথচ গভীর ভাষায় লিখেছেন উস্তাদ আমজাদ আলি খান। শিল্পের ইতিহাস চর্চায় এই বই এক অনবদ্য সংযোজন।

রিথিংকিং ট্রাইব ইন ইন্ডিয়ান কনটেক্সট/ রিয়্যালিটিজ, ইস্যুজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস

সম্পাদক: বিধানকান্তি দাস ও রজতকান্তি দাস

মূল্য: ৮৯৫.০০

প্রকাশক: রাওয়াত পাবলিকেশনস

দার্জিলিঙের জনজাতীয় সত্তা ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্ত দীর্ঘ কাল ধরেই চর্চার বিষয়। আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটের নিরিখে সমাজবিজ্ঞানীর আলোচনা আলোচ্য সংকলনটিতেও লভ্য। নৃতত্ত্বের বিষয়ে আছে বিশ্বজনীন মাপকাঠিতে দেখা মানবজীবনের নানা দিক। সুমুদ্রিত বইটি ‘ট্রাইব’ বা জনজাতীয় চর্চার হালহকিকত নিয়ে ক্রিয়াশীল অন্বেষণের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা। ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতার আয়োজনে এক জাতীয় আলোচনাচক্রে এই বিষয়টি সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে আলোচিত হলেও তার পরিসর অবশ্য বিস্তৃত নয়। ভারতের বহুত্ববাদ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র, রাজনৈতিক ভাবধারা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার মধ্যে জনজাতীয় গোষ্ঠীর প্রেক্ষাপট আলোচনা ও মূল্যায়নচিত্রকে অবশ্য অনুভব করা যায় প্রবন্ধগুলিতে। ‘ট্রাইব’ শব্দের বাস্তবভিত্তিক পর্যালোচনা, আঞ্চলিক অবস্থানে বৈশিষ্ট্যগত দিক, সার্বিক উন্নয়নে জনজাতীয় গোষ্ঠীর অবস্থান, বনবাসীদের কথা, জাতিসত্তা নিরূপণে রাষ্ট্রীয় নিয়মতান্ত্রিকতা সহ চর্চার সমসাময়িক ঝোঁক অন্বেষণ করেছে সংকলনটি। তবে মানবকল্যাণে পণ্ডিত আর পরিকল্পকদের সংযোগসাধনের পথ এখনও আগের মতোই অস্পষ্ট।

মেদিনীপুরের গ্রামের কথা ১০

সম্পাদক: তাপস মাইতি

মূল্য: ৩৫০.০০

প্রকাশক: উপত্যকা, মেদিনীপুর

দু’দশকের মধ্যেই অখণ্ড মেদিনীপুর জেলা ভাগ হয়ে এখন তিন-তিনটি জেলা— পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম। যে প্রশাসনিক সুবিধার জন্যই করা হোক না কেন, এর ফলে ইতিহাসের সংযোগসূত্র অনেক ক্ষেত্রেই খণ্ডিত হয়ে পড়ে। মালভূমি, পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র, পলিমাটির শ্যামলিমা এক সঙ্গে বাংলার আর কোনও জেলার ছিল না। অখণ্ড জেলার সেই গরিমাও এখন খণ্ডিত। গ্রাম জনপদও এ সবের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে— যা জনগোষ্ঠীর বসবাস, আঞ্চলিক ভাষা, পেশা, পুজোপার্বণ, মন্দির মসজিদ গির্জা, লোকশিল্প, নাচগাননাটকের লোকায়ত রূপ, রীতিনীতি, রাজঐতিহ্যের বুনিয়াদে একাত্মরূপ পায়। আলোচ্য সংকলনটিও সেই অখণ্ডতার নিদর্শনস্বরূপ প্রকাশনা। এ পর্যন্ত বিভিন্ন খণ্ডে আটশোরও বেশি গ্রামের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে লিখেছেন প্রায় দুশো জন। আঞ্চলিক পত্রপত্রিকায় বা একক উদ্যোগে গ্রাম বর্ণনা অন্য জেলায় দেখা গেলেও বর্তমান উদ্যোগ বিশেষ পরিকল্পনার সূত্রে ধারাবাহিক চর্চা। গ্রামের অবস্থান, জনগোষ্ঠী, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, মেলা ইত্যাকার বহুবিচিত্র তথ্য নিবন্ধীকরণ ভাবীকালের জন্য প্রয়োজনীয় হবে। তবে তথ্য সংগ্রহে অনেক ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট কাঠামো অনুসৃত না হওয়ায় তা লেখকভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে। কোথাও কোথাও নৃতত্ত্বের পাঠ্য-ছকের বিপদ কাটানো যায়নি। কোনও লেখায় গ্রামের যাত্রাভিনয়ের সাহিত্যিক সুলভ বর্ণনা যাতে গ্রামের কথা প্রায় অনুপস্থিত। আবার কোথাও সমৃদ্ধ গ্রাম-জনপদের মামুলি বিবরণ। একথা ঠিকই, সম্পাদনায় এ সব বিষয়ে খুব কঠোর হলে আঞ্চলিক পর্যায়ে এমন সংকলন করা মুশকিল। এর সার্বিক দিশা ও এমন প্রচেষ্টার ফল তাই সুদূরপ্রসারী হয়ে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement