মেদিনীপুরের প্রশাসনিক সভা মঞ্চ থেকে গোয়ালতোড়ের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
এ রাজ্যে শিল্প গল্প নয়, বাস্তব। মঙ্গলবার মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবির স্বপক্ষে তুলে ধরলেন পরিসংখ্যান।
শিল্পে লগ্নি টানতে পশ্চিমবঙ্গে নিয়মিত বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলন (বিজিবিএস) হয়। সরকার দাবি করে, রাজ্যে আসছে বিপুল বিনিয়োগ। তার পরেই মাঠে নামেন বিরোধীরা। লগ্নির আশ্বাসকে গল্প বলে কটাক্ষ করে তারা। এই তরজার প্রেক্ষিতে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুর কলেজ-কলেজিয়েট স্কুল মাঠকে ফের বিরোধীদের জবাব দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। বলেন, ‘‘অনেকে বলে, কোথায় শিল্প? কোথায় শিল্প? ওটা তো একটা গল্প। শিল্পকে শুধু গল্পের পর্যায়ে ফেললে হবে না।’’ এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘যারা বলে বিজিবিএসে কী হল, তাদের বলি, আমরা সাতটা বেঙ্গল বিজ়নেস সামিট করেছিলাম। প্রস্তাব পেয়েছিলাম প্রায় ১৯ লক্ষ কোটি টাকার। ১৩ লক্ষ কোটি টাকার কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলেছি।’’ এ বছরের সম্মেলনে ৪.৪০ লক্ষ কোটি টাকার প্রস্তাব এসেছে বলে দাবি করেছিল সরকার। মমতার বার্তা, তার মধ্যে শুধু শালবনিতেই ১৬ হাজার কোটি টাকা হয়ে গেল।
এ বার জেলা সফরেও শিল্পেই জোর দিয়েছেন মমতা। সোমবার শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীর প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের শিলান্যাস করেছেন। এ দিন গোয়ালতোড়ে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। তার পরেই বলেন, ‘‘পূর্ব ভারতে সৌরবিদ্যুতের এত বড় কারখানা এই প্রথম। ৮০% টাকা জার্মানি থেকে আসছে। ২০% আমরা, রাজ্য সরকার দিচ্ছি।’’ গোয়ালতোড়ের কেন্দ্রে লগ্নির অঙ্ক ৭৫০ কোটি টাকা। তাঁর বক্তব্যে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের প্রশ্নে মমতা কখনও উল্লেখ করেছেন ডেউচা-পাঁচামি প্রকল্পের কথা। কখনও বলেছেন, ‘‘পুরুলিয়ায় আমরা ৭২ হাজার কোটি টাকায় জঙ্গলসুন্দরী গড়েছি। সেখানে ইতিমধ্যেই পাঁচটি বড় সংস্থা আসবে বলে জানিয়েছে। তাতে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে।’’
চলতি বছরে বিজিবিএসের পরেই লগ্নির পথ মসৃণ করতে কমিটি গড়েন মুখ্যমন্ত্রী। গিয়েছিলেন লন্ডনে। সেখানেও তাঁর নজরে ছিল শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান। বিধানসভা ভোটে চোখ রেখে এ বার রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির ছবি তুলে ধরলেন জেলা সফরে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এমন তিনি আগেও করতেন। তবে তাতে মিশে থাকত একাধিক বিষয়। এই বছর মমতা শিল্পায়ন ছাড়া প্রসঙ্গান্তরে গিয়েছেন শুধু চাকরিহারাদের আন্দোলনের বিষয়ে। বাকি সময়টা দিয়েছেন শিল্পকে। বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না।
বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “বাম আমলে বিনামূল্যে এই জমি জিন্দলেরা নিয়েছিল শিল্প গড়বে বলে। কোথায় শিল্প? জমি ধরে রাখতে প্রথমে সিমেন্ট কারখানা করল। এখন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা বলছেন। রাজ্যে তো বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। মানুষ জানতে চায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কারখানা কবে হবে!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘রাজ্যের শিল্পের ইতিহাস থেকে ১৭টা বছর বেরিয়ে গেল, তার জন্য আগে ক্ষমা চান।’’
রাজ্যের শিল্পপতি তথা সরকারের নবগঠিত সিনার্জি কমিটির অন্যতম সদস্য সঞ্জয় বুধিয়ার অবশ্য মত, “মুখ্যমন্ত্রী শিল্প ও লগ্নি নিয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক। শান্তি বজায় রেখে কী করে রাজ্যের উন্নতি করা সম্ভব, তা প্রতিনিয়ত দেখিয়ে দিচ্ছেন।” বণিকসভা ভারত চেম্বারের সভাপতি নরেশ পাচিসিয়াও বলেন, “জিন্দল গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ কিংবা এ দিনের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প প্রমাণ করে, শিল্পে লগ্নি আনতে মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রশাসন কতটা তৎপর।”