Hindenburg Research

সেবি-আদানি ‘যোগ’ নিয়ে জেপিসি-র দাবি

কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে আগেই কারচুপি করে নিজেদের শেয়ার দর বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি ঠিক মতো তার তদন্ত করেনি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২৭
সেবি-র কর্ণধার মাধবী পুরী বুচ।

সেবি-র কর্ণধার মাধবী পুরী বুচ। —ফাইল ছবি।

সেবি-তে মোদী সরকারের নিযুক্ত কর্ণধার নিজেই প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গৌতম আদানি শিল্পগোষ্ঠীর শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত— এই নতুন অভিযোগ ওঠার পরে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ গোটা বিরোধী শিবির যৌথ সংসদীয় কমিটিকে দিয়ে এর তদন্ত করানোর দাবি তুলল। আগের অবস্থান থেকে সরে এসে আজ রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলও যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি তদন্তের দাবি তুলেছে।

Advertisement

বিরোধীদের প্রশ্ন, আমেরিকার শেয়ার সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের নতুন রিপোর্টে এই অভিযোগ উঠবে জেনেই কি আগেভাগে সংসদের বাদল অধিবেশনে ইতি টেনে দেওয়া হল? রাহুলের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই তদন্তে ভয় পাচ্ছেন! লোকসভার বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী কেন যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি তদন্তে ভয় পাচ্ছেন, সেই তদন্তে কী উঠে আসতে পারে, তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।’’ তাঁর প্রশ্ন, শেয়ার বাজারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এই অভিযোগ ওঠার পরে যদি সোমবার শেয়ার বাজারে ধস নামে এবং সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত লগ্নির লোকসান হয়, তা হলে তার দায় কে নেবে? প্রধানমন্ত্রী কি সেই দায় নেবেন?

কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে আগেই কারচুপি করে নিজেদের শেয়ার দর বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি ঠিক মতো তার তদন্ত করেনি। এখন দেখা যাচ্ছে, এর পিছনে সেবি-র কর্ণধার মাধবী পুরী বুচের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। আমেরিকার শেয়ার সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ দাবি করেছে, আদানিরা নিজেদের টাকায় দু’টি বিদেশি তহবিল তৈরি করেছিলেন। বারমুডা ও মরিশাসের ওই দুই তহবিলের টাকা আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে লগ্নি করে শেয়ারের দর ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেবি-র কর্ণধার মাধবী ও তাঁর স্বামী ধবল বুচ ওই তহবিলের মালিকানার অংশীদার ছিলেন। অথচ তদন্তে নেমে বিদেশি তহবিলের মালিকানাই খুঁজে বের করতে পারেনি সেবি।

আজ রাহুল অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘যার কাঁধে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারী সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব, সেই সেবি-র বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কারণ সেবি-র কর্ণধারের বিরুদ্ধেই শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।’’ শনিবার রাতে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট আসার পরে সেবি, মাধবী ও তাঁর স্বামী এবং আদানি গোষ্ঠী আলাদা আলাদা ভাবে বিবৃতি দিয়ে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু রাহুলের বক্তব্য, ‘‘মোদী সরকারের কাছে সাধারণ লগ্নিকারীদের প্রশ্ন হল, এখনও মাধবী পুরী বুচ ইস্তফা দেননি কেন? সুপ্রিম কোর্টে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দর কাণ্ডের মামলা উঠেছিল। নতুন গুরুতর তথ্য সামনে আসার পরে কি সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন?’’

কংগ্রেসের মতোই তৃণমূল, সিপিএম-সহ বাকি বিরোধী দলগুলিও দাবি তুলেছে, একমাত্র জেপিসি তদন্তেই এই গোটা ঘটনার পিছনে আসল তথ্য প্রকাশ্যে আসতে পারে। এর আগে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দর কাণ্ডে কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির জেপিসি তদন্ত চাইলেও তৃণমূল ভিন্ন অবস্থান নিয়েছিল। তৃণমূলের দাবি ছিল সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত হোক। কিন্তু আজ অবস্থান পাল্টে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের আগে আমরা জেপিসি-র পক্ষে ছিলাম না। কারণ সে সময় বিজেপি সংসদকে দমিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। বিজেপি সংসদে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। আমরা দু’টোই চাই। জেপিসি হোক। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তও হোক।’’ কংগ্রেসের প্রশ্ন, সোমবার সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল। শনিবার হিন্ডেনবার্গের নতুন রিপোর্ট এল। তার আগেই শুক্রবার আচমকা সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ করে দেওয়া হল কেন? এই রিপোর্ট আসছে খবর পেয়ে জেপিসি তদন্তের দাবি এড়াতে?

বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে বিজেপি শিবির পাল্টা দাবি করছে, কংগ্রেস শেয়ার বাজার-সহ গোটা দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দাবি করেছেন, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট আগেই সুপ্রিম কোর্ট ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দিয়েছে। বিজেপির দাবি, সেবি হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিল বলেই তারা এখন সেবি-র গায়ে কালি লেপতে চাইছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এল সন্তোষের দাবি, ‘‘সমস্ত নথি পড়লেই বোঝা যাবে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সেবি-কে নিশানা করতে চাইছে। গোটা সমাজ আসল তথ্যটা বুঝতে পারবে।’’ বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদীর অভিযোগ, ‘‘এ সব ভারতে অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র। কেন সংসদের অধিবেশনের সময়ই এই সব বিদেশি রিপোর্ট আসে?” কংগ্রেসের পাল্টা প্রশ্ন, অভিযোগ তো সেবি-র কর্ণধার ও আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তা নিয়ে বিজেপির নেতারা স্প্রিং দেওয়া পুতুলের মতো লাফাচ্ছেন কেন?

আজ কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সেবি-র কর্ণধার হিসেবে মাধবীর নিয়োগের পিছনে কি গৌতম আদানির হাত ছিল? কারণ গত কয়েক বছর ধরেই ক্ষমতার করিডরে শোনা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের পিছনে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এই শিল্পপতির হাত থাকে। কেন সংসদে আদানির বিরুদ্ধে কিছু বললেই বিজেপির মন্ত্রী-সাংসদরা লাফিয়ে ওঠেন?’’ তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র প্রধানমন্ত্রী মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মাধবী পুরী বুচকে সেবির কর্ণধার নিয়োগের আগে তিনি কি এই বিদেশি তহবিলে তাঁর অংশীদারিত্বের কথা জানিয়েছিলেন? এ বিষয়ে কি গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল?

আরও পড়ুন
Advertisement