bank

Banking Fraud: ফোনে কথা বলতে বলতেই লোপাট হচ্ছে টাকা, তিনটি বিষয় শুনলেই বুঝবেন ব্যাঙ্ক জালিয়াত

ফোনে কথা বলতে বলতেই ফাঁদ পাতে প্রতারকরা। ফলে এক ফোনেই নিমেষে লোপাট হয়ে যেতে পারে ব্যাঙ্কে সঞ্চিত সব টাকা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৩৭
সতর্ক থাকলেই রক্ষা পাওয়া যাবে।

সতর্ক থাকলেই রক্ষা পাওয়া যাবে। প্রতীকী চিত্র

শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, গোটা দেশে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সংখ্যা বাড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একেবারে সাধারণ মানুষের কাছে আসছে ফোন। অনলাইন লেনদেন সম্পর্ক অনভিজ্ঞদের ঠকাচ্ছে প্রতারকরা। সব ব্যাঙ্ক বারবার গ্রাহকদের সতর্ক করছেন, কিন্তু তাতেও কমছে না প্রতারকদের ফাঁদে পা দেওয়া। আর অনেক ক্ষেত্রেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। কারণ, অনেক দূরের গোপন আস্তানা থেকে গোটা প্রতারণা প্রক্রিয়া চলছে অনলাইনে। টেলিফোনে কথা বলতে বলতে ব্যাঙ্কের টাকা লোপাট করে নিচ্ছে জালিয়াতরা।

এই জালিয়াতরা যে ভাবে কথা বলে, তাতে মূলত তিনটি বিষয় থাকে। এক, কেওয়াইসি আপডেট। দুই, বড় অঙ্কের টাকা পুরস্কার। তিন, ফোনের সিম কার্ড আপডেট। যার একটি শুনলেই গ্রাহকদের বুঝতে হবে তিনি প্রতারণার ফাঁদে পা দিতে চলেছেন। দেশে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতারিতদের বড় অংশ এসবিআই গ্রাহক। তবে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা হাপিস করার জালিয়াতরা সব সময়ে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি সেজে ফোন করে না। অনেক সময়ে বিভিন্ন টেলিকম সংস্থার নামে ফোন করে। আর সেই ফোন যা যা নির্দেশ দেওয়া হয়, তা মানলে যে ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট থাকুক গ্রাহকদের টাকা হাতানো খুব সোজা হয়ে যায়। ফোনে কথা বলতে বলতে ফাঁদ পাতে প্রতারকরা। ফলে এক ফোনেই লোপাট হতে পারে ব্যাঙ্কে সঞ্চিত সব টাকা। তাই আগেভাগে ভুয়ো ফোন থেকে সতর্ক হওয়া দরকার।

Advertisement

গ্রাহকদের সতর্ক করে সম্প্রতি নেটমাধ্যমে স্টেট ব্যাঙ্ক যে বার্তা দিয়েছে, তাতেও তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। কেওয়াইসি আপডেটের নামে প্রতারণা, বিপুল টাকার প্রলোভন এবং ইমেল বা মেসেজ করে পাঠানো হচ্ছে ভুয়ো লিঙ্ক। জালিয়াতরা ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে কেওয়াইসি আপডেট করতে বলে। ডেবিট কার্ড বাতিল হয়ে যেতে পারে বলে ভয় দেখায়। প্রথমে ব্যাঙ্কে আসতে বলে এবং তারপরেই জানান আপনি চাইলে অনলাইনে গোটাটা এখন সেরে নিতে পারেন। এটাই ফাঁদ। মিথ্যা কেওয়াইসি আপডেট বা ডেবিট কার্ডের ব্লক খোলার নামে গ্রাহকদের অনলাইন লেনদেন করতে বলা হয়। জানতে চাওয়া হয় কী ওটিপি এসেছে। তার আগে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে নেয় কুশলী প্রতরাকরা। আর গ্রাহক ওটিপি বলে দিলেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট করা সহজ হয়ে যায়।

এ ছাড়াও বিপুল টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের পাঠানো হচ্ছে ইমেল বা মেসেজ। অনেক সময়ে ফোন করে জানানো হচ্ছে ভুয়ো পুরস্কার প্রাপ্তির কথা। সেই কারণে অনলাইনে আপডেট করার কথা বলে। সেই ফাঁদে পা দিলেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। আবার ফোন না করেও কিছু কিছু টাকা হাতানোর ঘটনা দেখা গিয়েছে। ইমেল মারফৎ পাঠানো হচ্ছে ভুয়ো লিঙ্ক। আর সেই ধরনের লিঙ্কে ক্লিক করলেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ভুয়ো ওয়েবসাইটে ঢুকে পড়েন গ্রাহকরা। সেখানে লগ ইন ডিটেইল দিলে অ্যাকাউন্টের তথ্য চলে যায় প্রতারকদের হাতে। তাই এই ধরনের ইমেল ও মেসেজে পাওয়া লিঙ্কে ক্লিক করা বিপজ্জনক।

আরও একটি পদ্ধতিতে গ্রাহকের টাকা হাতানো দিন দিন বাড়ছে। এই প্রক্রিয়ায় ওই তিনটি বিষয়ই বলে জালিয়াতরা। কেওয়াইসি আপডেট, পুরস্কারের প্রলোভন এবং ফোনের সিম কার্ড আপডেট করা। গ্রাহকদের খেয়াল রাখতে হবে, কিছু সঠিক তথ্য জানার পরে জালিয়াতরা ফোন করে। সেই সব তথ্য বলে গ্রাহকের কাছে ব্যাঙ্ক বা টেলিকম সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বাস অর্জন করে। এখন বিশ্বাস অর্জনের পরে যে নতুন পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে তা আরও বেশি বিপজ্জনক।

প্রথমে একটি মেসেজ আসছে। যাতে লেখা, ফোনের সিম বা ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড আপডেট করতে হবে। সত্বর যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। সেটা দেখে ওই নম্বরে পাল্টা ফোন করলেই অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কোনও এক শাখার প্রতিনিধি বা টেলিকম সংস্থার কাস্টমার কেয়ার ডেস্কের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনি এখনই অনলাইনে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কিছু টাকার রিচার্জ করুন। এ জন্য একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। জালিয়াত চক্রের প্রতিনিধির কথা মতো সরল বিশ্বাসে সব নির্দেশ পালন করলেই কাজ শেষ।

জালিয়াত চক্রের প্রতিনিধিরা গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘কেওয়াইসি কিউএস অ্যাপ’ (kyc qs app) টাইপ করে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে। এর পরে ফোনে রিচার্জ করার নির্দেশ দেয়। ‘কেওয়াইসি কিউএস অ্যাপ’ টাইপ করলে আদতে ‘টিম ভিউয়ার কুইক সাপোর্ট’ নামে একটি অ্যাপ খোলে। এই অ্যাপ কোনও ফোনে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এর ফলে কোনও লেনদেন করলে তাতে ব্যবহার করা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর থেকে পাসওয়ার্ড বা ওটিপি সবই অন্য ফোন থেকে দেখতে পাওয়া যায়। সেই পদ্ধতিতেই জালিয়াতরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা লোপাট করতে থাকে। এক একবারে ২৫ হাজার টাকা করে একের পর এক লেনদেনে টাকা তুলতে থাকে। গ্রাহক এসএমএস মারফৎ জানতে পারেন টাকা তোলার কথা। কিন্তু কিছুই করার থাকে না। ব্যাঙ্ক অভিযোগ জানানোর আগেই বেশির ভাগ সময় অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যায়।

Advertisement
আরও পড়ুন