Pahalgam

শ্রীনগর থেকে উড়ান ভাড়া মাত্রাছাড়া, মোদীকে চিঠি

কী ভাবে মাত্র এক-দু’দিনের উড়ানের ভাড়া মাত্রা ছাড়িয়েছে, তার একাধিক উদাহরণ তুলে ধরে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে চিঠি দিল ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের সংগঠন ফসমি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪০
২৪ কিংবা ২৫ এপ্রিল শ্রীনগর থেকে কলকাতায় ফেরার টিকিটের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে প্রায় ৮২ হাজার টাকায়।

২৪ কিংবা ২৫ এপ্রিল শ্রীনগর থেকে কলকাতায় ফেরার টিকিটের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে প্রায় ৮২ হাজার টাকায়। —প্রতীকী চিত্র।

পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে কার্যত আগুন হয়েছে শ্রীনগর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের উড়ান ভাড়া। অভিযোগ উঠেছে, পরিস্থিতি ঘোরালো হওয়ার সুযোগ নিয়ে তার অঙ্ক বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। কী ভাবে মাত্র এক-দু’দিনের উড়ানের ভাড়া মাত্রা ছাড়িয়েছে, তার একাধিক উদাহরণ তুলে ধরে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে চিঠি দিল ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের সংগঠন ফসমি। বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। আর এক বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রীকে দু-এক দিনের মধ্যেই চিঠি দেবে তারা।

ফসমির সভাপতি বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, ২৪ কিংবা ২৫ এপ্রিল শ্রীনগর থেকে কলকাতায় ফেরার টিকিটের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে প্রায় ৮২ হাজার টাকায়। গড় দাম রয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকার আশেপাশে। যা বহু সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। অবিলম্বে এই পরিস্থিতি বদলাতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পদক্ষেপ করা উচিত। কারণ পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে মানুষ প্রাণভয়ে যখন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চাইছেন, তখন উড়ানের এমন ভাড়া সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অমানবিক। এর পাশাপাশি বিশ্বনাথ এটাও দাবি করেছেন, কেন উড়ান সংস্থাগুলি এই সময় এত ভাড়া নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর তদন্ত করে দেখুক এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক।

বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের পর্যটন পরিষদের চেয়ারম্যান নরেশ আগরওয়াল জানান, অবস্থা এক-দু’দিনের মধ্যে স্বাভাবিক না হলে তাঁরাও দেশের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নায়ডুকে চিঠি দেবেন। তাঁর দাবি, সংস্থাগুলি যদি ভাড়া না কমায়, তা হলে আপাতত কেন্দ্র ভর্তুকি দিক। যাতে কেউ টিকিট কাটতে গিয়ে বিপাকে না পড়েন।

যদিও বুধবারই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সব উড়ান সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভাড়া অযথা না বাড়িয়ে যাত্রীদের টিকিটের চাহিদা মেটাতে বিমানের সংখ্যা বাড়ানো হোক। এই সময় উড়ানের দিন পরিবর্তন কিংবা বাতিলের ক্ষেত্রে যাত্রীদের থেকে কোনও রকম টাকা নেওয়া চলবে না। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, এই নির্দেশের সিংহভাগ খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে।

পর্যটন শিল্পের সংগঠন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুর অপারেটার্সের রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ দত্ত জানান, একমাত্র এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়া অন্য কোনও সংস্থা এই নির্দেশ পালন করার কথা জানায়নি। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা ভাড়ার ক্ষেত্রে একটা ঊর্ধ্বসীমা মেনে চলবেন। যদিও বৃহস্পতিবার শ্রীনগর থেকে কলকাতা টাটা গোষ্ঠীর ওই উড়ান সংস্থাটির টিকিটের দাম দেখিয়েছে ৬২ হাজার টাকা। তুলনায় ইন্ডিগোর দাম খানিকটা কম। শুক্রবার এই পথে টিকিটের দাম ২০ হাজারের সামান্য কম থেকে শুরু হয়েছে।

দেবজিৎ জানান, বিমানের টিকিটের দাম চাহিদা অনুযায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে একটা সীমা থাকা জরুরি। কেন্দ্রকে আগেও জানানো হয়েছে, দাম চাহিদার উপর নির্ভরশীল হলেও একটা ঊর্ধ্বসীমা সব গন্তব্যেই থাকা উচিত। এই নিয়ম না থাকলে বার বার এই সমস্যা তৈরি হবে। বহু মানুষ এই দামে টিকিট কিনতেই পারবেন না। ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলের সদস্য অনিল পঞ্জাবি বলেন, ‘‘লোকে ভয়ে এখন ঘরে ফিরতে চাইছেন তাই এখন এই ভাড়া নেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই। সর্বভারতীয় ক্ষেত্র থেকে বিমান সংস্থাগুলির কাছে আবেদনও করা হয়েছে দাম কমানোর। কারণ তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৫-৭ গুণও বেড়ে গিয়েছে।’’ তবে তাঁদের আবেদন যে খুব একটা কাজে এসেছে তা অবশ্য মনে করছেন না অনিল।

আরও পড়ুন