Payel De

Durga Puja 2021: বাবার সঙ্গে পার্ক সার্কাস ময়দানে হজমিগুলি কেনা—এই ছিল আমার দুর্গা পুজো

পুজো মানে আমার কাছে ছুটি, দু’দণ্ড অবসর।

Advertisement
পায়েল দে
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২১ ১৭:১১
পুজো মানে আমার কাছে ছুটি, দু’দণ্ড অবসর।

পুজো মানে আমার কাছে ছুটি, দু’দণ্ড অবসর।

ভিড়, উন্মাদনা, হইচই— কলকাতার পুজো ঠিক যেই কারণে বিখ্যাত, ঠিক সেগুলোই আমার পছন্দ নয়। ভাল লাগে না শহরের এই আলোকবর্তিকায় সেঁধিয়ে যেতে। বরং, পুজো মানে আমার কাছে ছুটি, দু’দণ্ড অবসর। অবশ্য বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গী, অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বদলেছে পুজোর সংজ্ঞাও। ছোটবেলায় পুজো ছিল এক রকম, এখন আর এক রকম। দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক...

বড় বড় ক্লাবের পুজো নয়, প্রতিমার মুখ নয়, এমনকি নতুন জামাও নয়— পুজোয় আমার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কী ছিল জানেন? পার্ক সার্কাস ময়দানের পুজোর মেলায় হজমিগুলি কেনা। সেই টানে ছোটবেলায় প্রতি বছর বাবার কাছে বায়না করতাম। বাবা ‘লং ড্রাইভ’ করে নিয়ে যেতেন সেই আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। ষষ্ঠীর রাতে আমাদের বরাবরের ঠিকানা। পথে যেতে যেতে যে ক’টা প্যান্ডেল পড়ত সেইটুকুই আমার ঠাকুর দেখা। বাবা নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়ে যেতেন, কিন্তু ছোট্ট মেয়ের আবদার বলে কথা। সহজে কি আর ফেলা যায়? তা ছাড়া বাবা গাড়ি চালাতেও খুব ভালবাসেন। আমার কাছে বহু দিন পর্যন্ত এটাই ছিল দুর্গাপুজোর মানে।

Advertisement
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গী, অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বদলেছে পুজোর সংজ্ঞাও।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গী, অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বদলেছে পুজোর সংজ্ঞাও।

এক ব্যতিক্রমী বছর বাদ দিলে পুজোর ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখা প্রায় হয়ইনি আমার। সেই এক বছর বন্ধুরা জোর করে রীতিমতো হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল ম্যাডক্সে। তখন কলেজে। সবে নাটক করতে শুরু করেছি। সেই নাটকের দলের সকলে মিলেই যাওয়া হয়েছিল। সব ঠাকুর দেখে বাড়ি ফিরেছিলাম যখন, ঘড়িতে ভোর ৫টা। আমি আর তখন নিজের মধ্যে নেই। তার উপরে প্রথম বার বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়া। উত্তেজনায় স্নিকার্স না পরে হিল জুতো পরেই ঘুরেছিলাম। কী যে বোকার মতো কাজ করে ফেলেছি, টের পেয়েছিলাম পরের দিন। ক্লান্তিতে, পা-ব্যথায় পরদিন একেবারে ধরাশায়ী। সেই এক বারেই যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছিল আমার। আর কখনও কলকাতার পুজোয় প্যান্ডেল-মুখো হইনি।

ও হ্যাঁ আর এক বার পুজো দেখেছি। তবে প্রবাসের পুজো। ২০১০ বা ২০১১ সালের কথা। আমার শ্বশুরবাড়ি কানপুরে। দ্বৈপায়নের সঙ্গে সম্পর্কের পর প্রথম বার শ্বশুরবাড়ির সকলে আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। ঘটনাচক্রে পুজোর সময়েই কানপুর যাই। প্রবাসী বাঙালিদের আপ্যায়ন আমায় মুগ্ধ করেছিল। তার রে‌শ আজও মনে লেগে আছে। ওখানে খুব বেশি পুজো হয় না। কলকাতার মতো পাগলামি নেই। যে ৪-৫টি পুজো হয়, সবই খুব ছিমছাম, ঘরোয়া, আটপৌরে। মা আসেন ডাকের সাজে, এক চালায়। সঙ্গে খাস বাঙালি ভোজ।

আমার আর দ্বৈপায়নের পায়ের তলায় সর্ষে। সুযোগ পেলেই ‘চরৈবেতি চরৈবেতি’ বলে বেরিয়ে পড়ি। এখন তো মেরাকও আমাদের সঙ্গী। পাহাড় আমাদের ভীষণ টানে। পুজোর এই ১০-১২ দিনের ছুটিটা আমরা কাটাই কোলাহল থেকে অনেক দূরে, প্রকৃতির কোলে। বিদেশেও গিয়েছি বেশ কয়েক বার। গত বছর থেকে করোনা পরিস্থিতির জন্য আপাতত তা স্থগিত। আগের বছর গিয়েছিলাম চিত্রে নামে দার্জিলিংয়ের এক ছোট্ট গ্রামে। এ বারও গন্তব্য উত্তরবঙ্গই।

এই বেড়াতে যাওয়া নিয়েই মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল এক বার। মা হতে চলেছি তখন। সেবার পুজোয় আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম গ্রিসে। নবমীর দিন নাক্সোস দ্বীপে। পুজোয় ঘোরাঘুরির রেওয়াজ শুরুর আগে পর্যন্ত নবমীর দিন পাঁঠার মাংস খাওয়ার একটা আকর্ষণ ছিল। কিন্তু বাঙালির পাঁঠার মাংসের ঝোল গ্রিসে আর কোথায় পাব? ঘুরতে ঘুরতে দেখি এক দোকানে ভেড়ার মাংস বিক্রি হচ্ছে। তাই দিয়েই পাঁঠার স্বাদ মেটাতে হয়েছিল আর কী!

Advertisement
আরও পড়ুন