এই পুজো এ বার ছ’বছরে পদার্পণ করল। ছবি : ভাস্বতী সরকার
গত ১৫ এবং ১৬ অক্টোবর দু’দিন ধরে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের বাঙালিরা এবং অন্যান্য দুর্গাপুজো ভালো-লাগা মানুষ জড়ো হয়েছিলাম।
প্রবাসে অনেক সময়েই পুজোর নির্দিষ্ট দিনে পুজো সম্পন্ন করা হয়ে ওঠে না। তার বিভিন্ন কারণও আছে। প্রাথমিক কারণ, পুজো সপ্তাহের মধ্যে কাজের দিনে পড়লে দিনক্ষণ মানা সম্ভব হয় না। আমরা তো এখানে পুজোর ছুটি পাই না। ফলে পুজো উইক এন্ডে করতে হয়।
আমাদের পুজো এ বার ছ’বছরে পদার্পণ করল। নিউজিল্যান্ড পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে। তাই এখানে এখন বসন্তকাল। কাশফুল না পেলেও বসন্তের নিউজিল্যান্ডে তার ভাই টুইটুই ফুল পাওয়া যায়। যা দেখতে একেবারে কাশফুলের মতো। সেটাই আমাদের কাছে পুজোর আমেজ বয়ে আনে।
আমরা ঠিক করেছিলাম, এ বার কোভিডবিধি মেনে সমস্ত নিয়মকানুন পালন করে পুজো করব। তাই সকলকে অনেক আগে থেকে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়তে হয়েছিল। আমাদের এই পুজোয় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের, বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ এসে অংশগ্রহণ করেন। আমরা তাই সরকারি নিয়ম মেনে এ বার পুজোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছিলাম। প্রতিটি ভাগে যাতে পঞ্চাশের বেশি অতিথি না আসেন, তার উপর কড়া নজর রাখা হয়েছিল।
তবে পর্যায়ক্রমে সকলেই যাতে আসতে পারেন এবং এক সঙ্গে একজোট হয়ে আনন্দ করতে পারেন, মা’কে বরণ করার থেকে বঞ্চিত না হন— সে কথা আমরা মাথায় রেখেছিলাম সব সময়। আমাদের পুজোর এটাই এ বার থিম— সকলে মিলে আনন্দ করা।
তবে খাওয়া ছাড়া তো বাঙালির পুজো হয় না! খাবারের একটা বিশাল আয়োজন সব সময়ে থাকে। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি। পুজো জমজমাট সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, বিচক্ষণ পরিকল্পনা, স্বাধীন চিন্তা এবং সকলের একজোট হয়ে কাজ করার জন্য। আক্ষরিক অর্থেই আমাদের পুজোয় তাই কোনও ‘প্রেসিডেন্ট’, ‘সেক্রেটারি’ নেই। আছে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার।
এটা স্বীকার করতেই হবে যে, সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় আর মা দুর্গার আশীর্বাদে আমাদের পুজো শুধু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নই হয়নি, বরং যে সমস্ত মানুষ পুজোয় এসেছিলেন, যে সমস্ত অতিথি বা সমাজের মাননীয় সদস্য এসেছিলেন, তাঁরা একবাক্যে বাহবা দিয়ে গিয়েছেন যে, বাঙালিরা দেখিয়ে দিয়েছে, কী করে করোনার ভ্রূকুটিকে ভয় না পেয়ে, সমস্ত নিয়ম মেনেও হইচই আর আনন্দ করা যায়। সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সিঁদুরখেলা, ধুনুচিনাচ, কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া— কোনও কিছুই বাদ যায়নি । আমাদের বিশ্বাস, আগামিদিনেও আমরা আমাদের এই ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারব। আর প্রার্থনা করব, দুনিয়া করোনামুক্ত হোক।