Advertisement
  • Associate Partner

Kolkata Bonedi Barir Puja

শ্যামা নন কালো রূপে পূজা পান মা দুর্গাও, জানলে অবাক হবেন

সেই থেকে আজ ২২২ বছর অমন কালো রূপেই মা পূজা পেয়ে আসছেন। প্রায় ৪৩৯ বছর আগে ১৫৮৫ অব্দে মায়ের পূজা শুরু করেন ঢাকা বিক্রমপুরের ভট্টাচার্য জমিদাররা।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৮
Share: Save:

শেষ রাত্রের বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন রামকান্ত ভট্টাচার্য। মন বড়ই উতলা। এত বছর (প্রায় দুশো বছর তখন অতিক্রান্ত) পূজো হচ্ছে মায়ের, এমন ধারা অশৈলী আগে কখনও ঘটেনি! কী অপরাধে মা তাদের এমন শাস্তি দিলেন? বোধনের আগের রাত্রে এমন ঘটনা কী সঙ্কেত দিচ্ছে?

অন্দর থেকে স্ত্রীলোকদের গুমরে কান্না শুনতে শুনতে চোখের পাতা জুড়ে এসেছিল তাঁর। নিদ্রা বড় কঠিন, পরিস্থিতি, সুখ-দুঃখ জ্ঞান নেই। ঘুম যখন ভাঙল, পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ। কোথাও থেকে এতটুকুও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে না। পরিবর্তে এক অতি সুন্দর সুগন্ধে ভরে গিয়েছে তাঁর ঘর। না, একটা আওয়াজ আসছে! কান পাতলেন... নুপুরের মৃদু নিক্কণ তুলে হেঁটে আসছে কেউ! বাহির বাড়ির দিক থেকে অন্দরের দিকে আসছে। রুদ্ধশ্বাস হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন রামকান্ত। ধীরে ধীরে তাঁর সামনে স্পষ্ট হলেন তিনি। এ কী দেখছেন, আপনা হতেই হাত দু’খানা বুকের কাছে জড়ো হয়ে গেল রামকান্তর। চোখ থেকে ঝরঝর করে গড়িয়ে নামল জল। নুপূরবিলাসী মন্দ্রকণ্ঠে বললেন, “যেমন রূপে আছি, আমাকে তেমনি পূজা কর, মায়ের আবার রং কী?”

সেই থেকে আজ ২২২ বছর অমন কালো রূপেই মা পূজা পেয়ে আসছেন। প্রায় ৪৩৯ বছর আগে ১৫৮৫ অব্দে মায়ের পূজা শুরু করেন ঢাকা বিক্রমপুরের ভট্টাচার্য জমিদাররা।সেকালে ঘর, মন্দির, আটচালা খড় বা শন (পাট) দিয়ে ছাওয়া হত। ভট্টাচার্য বাড়ির পুরোহিত পুজো করতে এসেছেন। গৃহদেবী মা মনসার পূজা সম্পন্ন করে তিনি দুর্গাঘরে আসবেন। এমন সময় ঘটে গেল অঘটন। প্রদীপের সলতেখানি কোন এক পাখি মুখে করে তুলে ধরল। কাকপক্ষীদের এমনধারা উৎপাতের সঙ্গে সকলেই পরিচিত। সেই লালতপ্ত সলতে ছিটকে পড়ল শনের চালে। আশ্বিনের বাতাসে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুন। আগুনের তাপে মৃন্ময়ী মাতৃমূর্তির গৌরবর্ণ তামাটে রং ধারণ করল। মায়ের মুখের কাছটি আগুনের তীব্র তাপে কালচে সর কালি পড়ল। মাথায় হাত দিয়ে পড়লেন ভট্টাচার্যেরা এবং গোটা গ্রামের মানুষ। মা তাদের বছরে এক বার আসেন। কী এমন অপরাধ হল যে মা তাদের কাছে থাকতে চান না! কাঁদতে কাঁদতে সে রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বৃদ্ধ রামকান্ত ভট্টাচার্য। আর তার পরে মা স্বয়ং এসেছিলেন স্বপ্নে, আশ্বস্ত করেছিলেন সন্তানকে...

আজও কালো রূপেই মা দুর্গা পূজিত হন ভট্টাচার্য বাড়িতে। ১৯৩৮ সালে দেশভাগের আগে ভট্টাচার্য পরিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে এসে থিতু হন। কিন্তু মায়ের পূজা বন্ধ হয়নি। কারণ মায়ের পূজা তো বন্ধ করা যায় না। তাই আজও ক্যানিংয়ে গেলে ভট্টাচার্য বাড়িতে দেখা মেলে কৃষ্ণবর্ণা মা দুর্গার।

কেবল কৃষ্ণবর্ণ নয়, মায়ের মূর্তিটিও বড় বৈচিত্র্যময়। মায়ের বাম দিকে থাকেন গণেশ এবং সরস্বতী। ডান দিকে লক্ষ্মী এবং কার্তিক। পাশেই অবস্থান করেন নবপত্রিকা। মায়ের পূজায় চালকুমড়োর বলি হয়। তবে নবমীর দিনে একটি বিশেষ রীতি পালিত হয়। শত্রু নিধনের নিদর্শন স্বরূপ, চালের গুঁড়ো দিয়ে পূর্ণাবয়ব মনুষ্যমূর্তি তৈরি করে তাকে মায়ের সম্মুখে বলি দেওয়া হয়।

মায়ের ভোগ বিধি সবই হয় স্বাভাবিক নিয়মে। তবে বিসর্জনের পরে প্রতিমাকে জলের তলায় পুঁতে রাখা হয়, যাতে ভেসে না ওঠে। কাঠামো তোলা হয় লক্ষ্মী পূজার পর।

বিচিত্র এই বঙ্গদেশ, বিচিত্র এই বঙ্গের মাতৃকথন। মা এখানে দেবী নন, ঘরের মেয়েটি। সন্তানের প্রতি স্নেহ আর বাপের প্রতি তার মায়ার টান - তাই বোধহয় এমন অদ্ভুত সব গাথা চাক্ষুষ করা যায়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ananda Utsav 2024 Durga Puja 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE