বিক্ষোভের আগুন। টায়ার পোড়াচ্ছেন প্যালেস্তাইনি। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে নাবলুসের কাছে। ছবি: রয়টার্স।
গাজায় ইজরায়েলি সেনার আক্রমণ অব্যাহত থাকল আজও। এ দিন ভোর রাতেই নিহত হয়েছেন আরও ১০ প্যালেস্তাইনি। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েলি সেনার ‘অপারেশন প্রোটেকটিভ এজে’ গাজায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে বলে খবর। আহত অন্তত ৬৫০। একযোগে আক্রমণে নেমেছে ইজরায়েলি বায়ু ও নৌসেনা।
এখনও পর্যন্ত ৫৭০টির মতো রকেট হামলা করেছে ইজরায়েল। আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার ৩০০টিরও বেশি বাড়ি। ঘরছাড়া হয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ। সর্বোপরি, হামলার চতুর্থ দিনে সেনা পাঠিয়ে গাজা দখলের ইঙ্গিতও মিলেছে ইজরায়েলি প্রশাসনের তরফে।
সূত্রের খবর, গাজা দখলে ৪০ হাজার সেনা প্রস্তুত রেখেছে ইজরায়েল। দু’ বছর আগে গাজা দখলে রাখতে যে সেনা পাঠানো হয়েছিল, এ বার সংখ্যাটা তার থেকেও ১০ হাজার বেশি। জুনের মাঝামাঝি থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে প্যালেস্তাইনের গাজা ও ওয়েস্টব্যাঙ্কে। ১২ জুন ৩ ইজরায়েলি কিশোরের অপহরণের অভিযোগ ওঠে হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। পরে তাদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই পাল্টা আক্রমণের অভিযোগ ওঠে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। নিহত হন এক প্যালেস্তাইনি যুবক। অভিযোগ, পূর্ব জেরুজালেম থেকে তাকে অপহরণ করে পুড়িয়ে মারা হয়। যদিও বিবদমান দু’ পক্ষের কেউই কোনও ঘটনার দায় স্বীকার করেনি।
তার পরেই গাজায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইজরায়েল। সোমবার গাজা থেকে ইজরায়েল লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায় হামাস। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় ইজরায়েলের হামলা। তাদের দাবি, হামাস-সহ প্যালেস্তাইনের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে জব্দ করতেই এই আক্রমণ। দেশের দক্ষিণ প্রান্তের সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এ ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না বলে মত ইজরায়েলি সেনার। তাদের দাবি, গাজায় বেছে বেছে হামাসের ‘কম্যান্ড সেন্টার’গুলিকেই নিশানা করা হচ্ছে। তবে প্যালেস্তাইনি প্রশাসনের দাবি, নিহতদের মধ্যে ২২ জন শিশু ও ২০ জন মহিলাও রয়েছেন। রকেট হামলা থেকে রেহাই পাননি আঠেরো মাসের শিশু কিংবা ৮০ বছরের মহিলাও।
প্যালেস্তাইনি অথরিটি প্রসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইতিমধ্যে সাম্প্রতিক এই সঙ্কট নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে। বৈঠকের পর তিনি জানান, “ইজরায়েল মুখে যা-ই বলুক না কেন, এই হামলা কখনই হামাস কিংবা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়।”
হামাসের হামলার নিন্দা করে ইজরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে আমেরিকা। হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ২০১২ সালের নভেম্বরে দু’পক্ষের যে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল তা ফের কার্যকর করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ইজরায়েলকে অনুরোধ করেছেন ওবামা।
ইজরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে হামাস। এক ভিডিও বার্তায় ওই সংগঠন জানিয়েছে, “গোটা বিশ্ব দেখবে ইজরায়েলি সেনার মাথার খুলির উপর খালি পায়ে হেঁটে বেড়াবে গাজার বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা।”
আজই লেবানন থেকে একটি রকেট উত্তর ইজরায়েলের মেটুলা শহরে আছড়ে পড়েছে বলে সূত্রের খবর। জানা যায়নি কে এই হামলা করেছে। ইজরায়েল অবশ্য লেবাননকেই দোষারোপ করেছে। কূটনীতিকদের মতে, লেবানন নিজেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাই তারা ইজরায়েলের সঙ্গে নতুন ঝামেলায় জড়াতে চাইবে না কি না সন্দেহ।