‘মেয়েরা স্কুলে না গেলে আমিও যাব না’— বার্তা হাতে আফগান খুদে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া।
তালিবান শাসনে নারীদের ‘স্বাধীনতা’ যে খর্ব হবে এ আর নতুন কী! বাড়ির বাইরে যাওয়াতেও যেখানে নিষেধাজ্ঞা, সেখানে স্কুলে যাওয়ার অনুমতি মেলার কথা তো মনে আনাও দুঃসাহস! এর মাঝে মেয়েদের স্কুলে ফেরানোর আশ্বাস কোনও ‘চমৎকারের’ চেয়ে কম কি? ফলে মঙ্গলবার সকালে তালিবান মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ যখন জানালেন যে মেয়েদের জন্য স্কুলের দরজা ‘খুব তাড়াতাড়ি খোলার ভাবনাচিন্তা’ করছে তারা, এমনকি ‘খুব দ্রুত এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে’ তখন খুশির চেয়ে বিস্ময়ের রেশই বেশি চোখে পড়ল সাধারণ আফগানদের চোখমুখে।
আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার পরে যখন মেয়েদের জন্য স্কুলের দরজা বন্ধ হল তখনও এতটা বিস্মিত হয়নি জনগণ। এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সুর চড়া হচ্ছিল ঠিকই। তবে বেশির ভাগটাই সীমান্তের বাইরে থেকে। সঙ্গে জুড়েছিল দেশের অন্দরের এক দল ছাত্রের ‘দুঃসাহসিক’ দাবি! ছাত্রীদের বাদ রেখে ছাত্রদের জন্য সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয় স্কুলবাড়িগুলি। তালিবানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে একদল ছাত্র দাবি তোলে, সহপাঠিনীদের ক্লাসে আসার অনুমতি না-দিলে ক্লাসে ফিরবে না তারাও। এই বার্তা দিয়ে পোস্টার হাতে স্কুলপড়ুয়াদের বেশ কিছু ছবিও বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সম্প্রতি আমেরিকার এক সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র বলে, ‘‘মেয়েরা সমাজের অর্ধেক অঙ্গ। যত দিন তারা স্কুলে না ফিরছে, তত দিন আমিও স্কুলে যাব না। শুধু আমি একা নয়, আমার অনেক বন্ধুই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পরে অবশ্য তালিবানের মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ এই পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ খুলতে চাননি। শুধু বলেছিলেন, ‘‘ছেলেদের স্কুল খুলেছে। সব ছাত্র ও শিক্ষকদের উচিত নিয়ম মেনে ক্লাসে ফিরে যাওয়া।’’ ফলে এ দিন সেই জ়বিউল্লার মুখেই তাদের স্কুলে ফেরানোর আশ্বাস শুনে খানিকটা হলেও যে আশায় বুক বাঁধছে মেয়েরা তা অবশ্য বলাই বাহুল্য। হয়তো ঘরের আড়াল থেকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছে ওই ‘একরোখা’ সহপাঠীদের অনড় মনোভাবকে।