গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
গালওয়ান উপত্যকায় সেনা সংঘর্ষের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারত-চিন সম্পর্কে অভূতপূর্ব উত্তেজনা। জটিলতা কাটাতে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু রাশিয়া জানিয়ে দিল, নয়াদিল্লি-বেজিং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্তেজনা প্রশমনে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। আজ মঙ্গলবার রাশিয়া-ভারত-চিন (আরআইসি) বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মন্তব্য, ‘বাইরের সাহায্য’ দরকার নেই দু’দেশের। নিজেরাই সমস্যা মিটিয়ে নিতে সক্ষম, বললেন ল্যাভরভ।
অনেক দিন আগে থেকেই ত্রিপাক্ষিক বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন প্রাণঘাতী সেনা সংঘর্ষের পর বেঁকে বসেছিল নয়াদিল্লি। এমন পরিস্থিতিতে বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব নয় বলেই এক প্রকার জানিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। কিন্তু আয়োজক দেশ রাশিয়ার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বৈঠকে যোগ দিতে রাজি হয় ভারত। সেই মতো আজ ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বৈঠকে যোগ দেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেনা সংঘর্ষের পর চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন জয়শঙ্কর। সেই অর্থে ওই সংঘর্ষের পর এই প্রথম মুখোমুখি হলেন দুই বিদেশমন্ত্রী।
তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা না পসন্দ হলেও গালওয়ান সংঘর্ষের জেরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক যাতে ভেস্তে না যায়, তার জন্য সক্রিয় ছিল ভ্লাদিমির পুতিন অ্যান্ড কোং। সেই চেষ্টায় সফল রাশিয়া। বৈঠকের পর ল্যাভরভ বলেন, ‘‘আমি মনে করি না, ভারত ও চিনের বাইরের কারো সাহায্যের দরকার আছে। দ্বিপাক্ষিক বা অভ্যন্তরীণ কোনও বিষয়ে তাঁদের সাহায্যের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। দুই দেশ নিজেরাই সমস্যা মিটিয়ে নিতে সক্ষম।’’
আরও পড়ুন: গালওয়ানে হামলার নির্দেশ দিয়েছিল চিন, বলছে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট
সামরিক পর্যায়ের আলোচনা চলছিলই। তার মধ্যেই গলওয়ান উপত্যকায় দু’পক্ষের সেনার মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আবার সংঘর্ষের পরেও মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে। সোমবারও প্রায় ১১ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। সেই প্রসঙ্গ টেনে ল্যাভরভ বলেন, ‘‘নয়াদিল্লি ও বেজিং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিরক্ষা পর্যায়ে বৈঠক শুরু করেছে তারা। বিদেশমন্ত্রীরাও কথা বলছেন। কোনও দেশই এমন কোনও মন্তব্য করেনি, যাতে মনে হয়, কূটনৈতিক পথে তারা সমাধান চায় না।’’
আরও পড়ুন: ‘নিহত কত, তাঁদের দেহ কোথায়?’ দেশেই নাগরিকদের তোপের মুখে চিন
গালওয়ন সংঘর্ষের পর দেশের অভ্যন্তরে সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই বৈঠক ছাড়াও একাধিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী সংঘর্ষ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু কোথাও চিনের নাম উল্লেখ করেননি। আজকের বৈঠকে সেই পথেই হেঁটেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। চিনের নাম না করেও কড়া বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সব দেশেরই উচিত আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা। বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় দেশগুলির এ বিষয়ে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠা উচিত।
গত ১৫ জুন রাতে গালওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী। ভারতের দিকে ২০ জনের মৃত্যু হয়। তবে চিনের পক্ষে কত জনের মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট করেনি বেজিং। শুধু এক জন মেজর জেনারেল পর্যায়ের অফিসারের মৃ্ত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু ওই সংঘর্ষের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্তপ্ত আবহের মধ্যে এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।