জেকব ব্লেক
বর্ণ-বিক্ষোভ দমনে সোমবার টানা আধ ঘণ্টা লাঠিচার্জ আর কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছিল পুলিশ। কাল চলল গুলিও। গত রবিবার পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে পুলিশের ছোড়া সাত-আটটা গুলিতে প্রায় ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া কেনোশার কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জেকব ব্লেক এখনও লড়ছেন হাসপাতালে। তাঁর পরিবারের আইনজীবী বেন ক্রাম্প সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, মিরাকল ছাড়া জেকবের সোজা হয়ে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব। ছয় সন্তানের বাবা কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটির একাধিক অঙ্গ-প্রতঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। লাগাতার অস্ত্রোপচার চলছে। এরই মধ্যে কাল ব্লেকের উপর পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হল দু’জনের। গুলিবিদ্ধ আরও এক জনের অবস্থা চূড়ান্ত আশঙ্কাজনক। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, হিংসা সামাল দিতে কেনোশায় ফেডারেল বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
জেকবের মা প্রথম দিন থেকেই সহনাগরিকদের শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়ে আসছেন। কালও বললেন, ‘‘আমার ছেলেটা যদি কোনও দিন জানতে পারে, ওকে নিয়ে শহর উত্তাল, ও নির্ঘাত খুব কষ্ট পাবে।’’ জেকবের বাবা কিন্তু চোখে জল নিয়েই ফুঁসছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলেটাকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করল না পুলিশ। পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে বেমালুম সাত-আটটা গুলি চালিয়ে দিল! কী করে পারল?’’
সিনিয়র জেকব ব্লেকের কথা ধার করে ‘মাই সন ম্যাটার্স’ স্লোগানে তৃতীয় দিনেও একই রকম অগ্নিগর্ভ রইল কেনোশা শহর। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া একধিক ভিডিয়ো-ছবিতে রইল কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় কালো হয়ে যাওয়া শহরের আকাশ। পুলিশের বলপ্রয়োগে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া মিছিলের প্রাণপণ দৌড়। এরই মধ্যে এল গুলি চলার খবর। কেনোশা পুলিশের তরফেই জানানো হল, কাল রাত ১১টা ৪৫ নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। আর তাতেই মৃত্যু হয় দু’জনের। কিন্তু গাড়িতে ওঠার সময়ে নিরস্ত্র জেকবের গেঞ্জি টেনে ধরে কেন সে দিন পুলিশকে গুলি চালাতে হয়েছিল, ঘটনার তিন দিন পরেও তার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি। অভিযুক্ত পুলিশদের নামও প্রকাশ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ তৈরি হয়েছে লাখখানেকের শহর কেনোশায়। পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, উইসকনসিন প্রদেশের গভর্নর টনি এভার্স ইতিমধ্যেই শহরে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ন্যাশনাল গার্ডের বহর আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। শহর তবু ফুঁসছেই।
আরও পড়ুন: হোয়াইট হাউসে নাগরিকত্ব সুধাকে
গত মে মাসে মিনিয়াপোলিসের রাস্তায় মাটিতে শুইয়ে ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চেপে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে মেরেই ফেলেছিল পুলিশ। যার প্রতিবাদে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল দেশের প্রায় সব বড় শহরে। করোনা-কাঁটাকে পাত্তা না দিয়েই পথে নেমেছিল বিক্ষুব্ধ মানুষের ঢল। নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জেকবকে নিয়ে ফের আমেরিকায় সেই ছবি দেখার আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞেরা। এমন ভাবনা যে অমূলক নয়, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট ক্লাইড ম্যাকলেমোরের কথাতেই তা স্পষ্ট। তিনি বললেন, ‘‘জেকবের জন্য সুবিচার আর দোষী অফিসারদের উপযুক্ত শাস্তি না-হওয়া পর্যন্ত রাস্তা থেকে সরে আসছি না।’’