ছবি: রয়টার্স।
করোনার একের পর এক ধাক্কা কাটিয়ে ভারত-সহ গোটা বিশ্ব যখন অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের আশায় রয়েছে, সেই সময় চাকা ঘোরা নিয়ে সংশয়ের বার্তা দিল আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)। অতিমারির বিরূপ প্রভাব বহাল থাকা এবং চড়া মূল্যবৃদ্ধির হার সেই পথে সংশয় বাড়াচ্ছে বলেই তাদের মত। একই সঙ্গে আইএমএফ স্পষ্ট বলেছে, অতিমারি আর্থিক বৈষম্য তো বাড়িয়েছেই, দারিদ্রকেও ঠেলে তুলেছে অনেকখানি।
তবে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাটির এ হেন হুঁশিয়ারির মুখে দাঁড়িয়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ফের দাবি করেছেন, ভারতের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বলেছেন, কঠিন সময়ের মোকাবিলা করে ভারত বিশ্বের দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধির দেশ হওয়ার পথেও আবার পা রেখেছে। উদাহরণ হিসাবে এপ্রিল-জুনে উঁচু বৃদ্ধির (২০.১% ) পরিসংখ্যান তুলে ধরছেন নির্মলা। বিরোধীরা অবশ্য আগেই প্রশ্ন তুলেছে, গত বছর ওই সময় প্রায় ২৪% সঙ্কোচনের নিচু ভিতের তুলনায় এ বারের উঁচু বৃদ্ধি আদৌ কতটা আশাব্যঞ্জক? আইএমএফ তাদের বার্ষিক সম্মেলনের শেষে অতিমারির মোকাবিলায় প্রতিষেধক প্রয়োগের নিরিখে উন্নত ও দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে বিস্তর ফারাকের প্রশ্নেও অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের গতি নিয়ে সংশয়ী। তাদের দাবি, ‘‘ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি বাড়িয়েছে। বাড়িয়েছে দারিদ্র ও আর্থিক বৈষম্য। ’’
সংস্থাটির বক্তব্য, উন্নত দেশগুলির জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশের কাছে প্রতিষেধক পৌঁছলেও, দরিদ্র দেশগুলির ক্ষেত্রে তা মাত্র ৪%। পরিস্থিতি সামলাতে দরিদ্র দেশগুলিতে তাই দ্রুত প্রতিষেধক ও জরুরি ওষুধপত্র জোগানোর বার্তা দিয়েছে তারা। এরই মধ্যে বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে জ্বালানির দাম। সেই সূত্রে মূল্যবৃদ্ধির হারের আরও মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা। বস্তুত, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক-ও জ্বালানির চড়া দর কমাতে কর ছাড়ের সওয়াল করে নিয়ে সরকারকে সতর্কবার্তা দিয়েছে। আইএমএফ-এর কর্তাদের দাবি, সারা বিশ্বে মূল্যবৃদ্ধিতে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ধাক্কা খাচ্ছে বুঝলেই আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভ-সহ অন্যান্য দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।
তবে মোদীর যুক্তি আইএমএফ-ই চলতি অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৯.৫% হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। ফলে অন্তত ভারতের ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে নিরাশার প্রশ্ন উঠছে নাত। এ দিন একটি অনলাইন অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, ‘‘অতিমারির কঠিন পথ পেরিয়ে ভারতের অর্থনীতি দ্রুত পুনরুজ্জীবনের পথে। বিশ্ব ভারতের বিষয়ে আশাবাদী।’’
অন্য দিকে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে নির্মলার দাবি, ভারত সাহসের সঙ্গে অতিমারির কঠিন সময়ের মোকাবিলা করে করোনা-পূর্ব আর্থিক কর্মকাণ্ডের ৯০% পুনরুদ্ধার করেছে। যার ভিত্তি প্রতিষেধক বণ্টন, আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প ও মোদী সরকারের সংস্কার। সাফল্যের পক্ষে প্রমাণ হিসাবে, গত এপ্রিল-জুনে ২০.১% বৃদ্ধি, জিএসটি বাবদ বিপুল আয় ইত্যাদি তুলে ধরেছেন তিনি।
যদিও বিরোধী ও সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেরই পাল্টা দাবি, গত বছরের অর্থনীতির সঙ্কোচনের নিচু ভিতের নিরিখে বৃদ্ধিকে দেখার কথা খেয়াল রাখতে হবে। তেমনই দেশের শেয়ার সূচক ৬১,০০০ পেরোলেও কর্মসংস্থানের ছবি এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। দেশে আর্থিক বৈষম্যও বেড়েছে। সর্বোপরি যে হারে গত মাসের শেষ থেকে তেলের দর প্রায় নিয়মিত বেড়ে রোজই নজির গড়ছে, তাতে মূল্যবৃদ্ধির আঁচ পড়ছে জনজীবনে, শিল্প-আর্থিক ক্ষেত্রেও। সব মিলিয়ে সংশয়ের মেঘ আদৌ কেটেছে কি? বরং উৎসবের আনন্দ মাটি করে ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা থাকছেই।