— ফাইল চিত্র
কবে যাবে করোনা! এই প্রশ্নের উত্তর পেতে মুখিয়ে গোটা দুনিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এত দিন এ নিয়ে মুখ না খুললেও, কাল কিছুটা আশার আলো দেখিয়েই সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস জানিয়েছিলেন, তাঁর আশা দু’বছরেই করোনা-মুক্ত হবে পৃথিবী। যদিও তার ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই আজ ব্রিটেন সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শদাতা বিজ্ঞানী মার্ক ওয়ালপোর্টের দাবি করে বসলেন, এই মারণ ভাইরাস সহজে যাওয়ার নয়। বেশ কয়েক দফা ভ্যাকসিনের বুস্টার ছাড়া রেহাই নেই। একমাত্র নিয়মিত প্রতিষেধকেই করোনা-মুক্তি সম্ভব।
সপ্তাহখানেক আগেই হু জানিয়েছিল, এই অতিমারি আবহে যে কোনও মুহূর্তেই ঘুরে দাঁড়াতে পারি আমরা। গতকাল কার্যত সেই রেশ ধরেই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টেড্রস ১৯১৮-র অতিমারি ‘স্প্যানিশ ফ্লু’-র প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যোগাযোগ যে ভাবে বেড়েছে, সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে তা সমস্যার। কিন্তু প্রযুক্তিও এখন অনেক উন্নত। তাই আশা করছি, দু’বছরেরও কম সময়ে করোনা থেকে মুক্তি পাব আমরা।’’ তবে মাস্ক পরাটা যে জরুরি, সে কথাও মনে করিয়ে দেন হু-র প্রধান।
তবে টেড্রস এ কথা বলতে গিয়ে যে হেতু নির্দিষ্ট কোনও কারণ দেখাননি, তাই আজ দিনভর পাল্টা মতও উঠে এসেছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ওয়ালপোর্ট যেমন বললেন, ‘‘এই কোভিড-১৯ স্মল পক্সের মতো কোনও রোগ নয় যে, এক বার প্রতিষেধকেই সম্পূর্ণ নির্মূল করা যাবে। বরং এই ভাইরাস চিরকালের জন্য কোনও না-কোনও ভাবে থেকে যাওয়ার জন্য এসেছে।’’ তা-হলে মুক্তির উপায়? টেড্রসকে কার্যত খণ্ডন করেই ওয়ালপোর্ট দাবি করেন, সফল ভ্যাকসিন ছাড়া এর মোকাবিলা সম্ভব নয়। এর পরেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বেশ কয়েকটি সম্ভাবনাময় ক্যান্ডিডেট নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমাদের দেশেই তো দু’টি ভ্যাকসিন তৈরির প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে।’’
ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে শামিল আমেরিকাও। কিন্তু সেটির অগ্রগতি নিয়ে আদৌ সন্তুষ্ট নন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অন্দর থেকেই কেউ ভ্যাকসিন ট্রায়ালে বাগড়া দিচ্ছে, যাতে ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে কাজের কাজ কিছুই না-হয়! পরোক্ষে এ নিয়ে বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবিরকেও নিশানা করতে শুরু করেছে ট্রাম্প-শিবির। সূত্রের খবর, আজ এফডিএ কমিশনার স্টিফেন হানকে ফোন করে ভ্যাকসিন পরীক্ষায় গতি আনার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।
বিশ্ব জুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৮ লক্ষ ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে শুধু আমেরিকাতেই মৃত অন্তত ১ লক্ষ ৭৫ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকায় প্রায় ৪৯ হাজার করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ডিসেম্বর নাগাদ দেশে রোজ সর্বাধিক ছ’হাজার করে করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হতে পারে।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঝড়ে কাবু জার্মানি। ২৬ এপ্রিলের পর থেকে ধরলে, আজই রেকর্ড দু’হাজার নতুন সংক্রমণের খবর মিলেছে। মার্চের একটা সময় থেকে এপ্রিলের গোড়া পর্যন্ত যদিও সে দেশে ছ’হাজার করে দৈনিক সংক্রমণ হচ্ছিল। সংক্রমণ বাড়ছে ফ্রান্স, স্পেন, ইটালি, দক্ষিণ কোরিয়াতেও। তবে আগের থেকে প্রকোপ অনেকটাই কম বলে মনে করা হচ্ছে।