দূর আর নয়

পাকিস্তানকে শক্ত করে ধরে চিন, যাতে আমেরিকার ধাক্কায় না পড়ে। ভারতও বাগে থাকে। তাদের সব প্রকল্পেই চিনের সাহায্য অবারিত। পাকিস্তানের বাজার চিনের দরকার। আরব সাগরে নতুন ফ্রেট করিডরের পরিকল্পনা, দু’দেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াতে।

Advertisement

অমিত বসু

বাংলাদেশ শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ১৩:১৯
Share:

পাকিস্তানকে শক্ত করে ধরে চিন, যাতে আমেরিকার ধাক্কায় না পড়ে। ভারতও বাগে থাকে। তাদের সব প্রকল্পেই চিনের সাহায্য অবারিত। পাকিস্তানের বাজার চিনের দরকার। আরব সাগরে নতুন ফ্রেট করিডরের পরিকল্পনা, দু’দেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াতে। পাকিস্তানকে নিয়ে ব্যস্ত চিন, বাংলাদেশ সম্পর্কে উদাসীন। কোনও সাহায্যে এগিয়ে আসে না, দূরে দূরে থাকে। দেখছি, দেখব বলে এড়িয়ে যাওয়া। এ বার পরিস্থিতি নতুন করে চিনেছে চিন। বুঝেছে, বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্যিক বিস্তার অসম্ভব। কুড়ি কোটির দেশটির সম্ভাবনা অনেক। বন্ধুত্ব বাড়ালে আখেরে লাভ তাদেরই। বছরের শুরুতেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে তারা সাহায্যের হাত বাড়াল বাংলাদেশের দিকে। চমকেছে বাংলাদেশও। এতটা আশা করেনি তারা। অন্য দেশের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে, মেঘনায় নতুন সেতু নির্মাণে, চিনের কাছেও সাহায্যের আবেদন রেখেছিল। বাংলাদেশ ঢাকায় চিনা দূতাবাসে ইকনমিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ওয়াং জিজিয়ানের কাছে চিঠি পাঠায় ঢাকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, ই আর ডি। তেমন কোনও আশা না নিয়েই পত্র প্রেরণ। হঠাৎ মরা গাছে ফুল ফোটার মতো সুফলের ইঙ্গিত। চিন সাহায্যে রাজি।

Advertisement

অভাবনীয় প্রাপ্তিতে তৃপ্ত বাংলাদেশ। তারা চিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতির নতুন ভাবনা শুরু করেছে। এমনিতে দু’দেশের মধ্যে বিদ্বেষ বলে কিছু নেই। দেওয়া-নেওয়াটা মসৃণ ছিল না। চিন এক তরফা বাণিজ্য করেছে বাংলাদেশে। নদীর ঢেউয়ের মতো চিনের পণ্য আছড়ে পড়েছে ঢাকা থেকে শহরে গ্রামে-গঞ্জে। চিন সব দেশেই সেটা করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশই বা বাদ যাবে কেন! এতে আপত্তির কী থাকতে পারে। তাই বলে চিন শুধু নেবে, দেবে না কিছুই, তাই বা কী করে হয়। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের গুরুত্ব যে চিন স্বীকার করেছে, সেটাই যথেষ্ট।

চিনের সাহায্যের অঙ্কটা তেমন বড় কিছু নয়। অন্য দেশও দিতে পারত। চিনের দেওয়াটা প্রতীকী মাত্র। তাদের সহায়তায় গোপালদি ও কাড়িয়াকান্ধি পয়েন্টে নির্মিত হবে নতুন সেতু। এটা হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার কমবে। ঢাকা-সিলেট পৌঁছতে ২২ কিলোমিটার কম যেতে হবে। মেঘনা আর গোমতী নদীর ওপর দু’টি বড় সেতু রয়েছে। দূরত্ব কমাতে আরও একটি সেতুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য হবে ২ কিলোমিটার। এটা হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে। গাজীপুরের টঙ্গী দিয়ে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতে গতি আসবে। সময় লাগবে অনেক কম। ঢাকা থেকে কুমিল্লার দূরত্বও কমবে।

Advertisement

যেখানে সেতুটি হচ্ছে সেখানে ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কের পয়েন্টে মেঘনা পেরোতে ফেরির ব্যবস্থা আছে। পারাপারে ভিড়ের চাপে যাত্রীদের যথেষ্ট দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতু হলে সেই ঝক্কি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। যানজটও থাকবে না। সেতুটি করতে খরচ হবে ২৩ কোটি ১৯ লক্ষ ডলার। চিন দিচ্ছে ১৮ কোটি ৪৫ লক্ষ ডলার। বাকি টাকাটা দেবে বাংলাদেশ সরকার। সেতু কর্তৃপক্ষ মাপজোক শুরু করছে।

নতুন রাস্তাঘাট, সেতু, ফ্লাইওভার নির্মাণে সক্রিয় সরকার। এ সব প্রকল্পর কাজ একবার হাতে নিলে দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। সমস্যাটা অন্য জায়গায়। শিল্পায়নের কর্মসূচি সেভাবে এগোচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগের আবেদন জানানো হচ্ছে। অনেক দেশই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে জমির অভাব নেই। এক কথায় জমি শিল্পর জন্য দেওয়া যেতেই পারে। নদীমাতৃক দেশ। জল তো আছেই। বিদ্যুতের ঘাটতি অনেকটাই মিটিয়ে ফেলা গিয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্পে উৎপাদনের কাজ অবিলম্বে শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব থেকে প্লাস পয়েন্ট গ্যাস। গ্যাসের ভাণ্ডার যথেষ্ট। গ্যাস ফুরনোর শঙ্কা ছিল। এখন সেটা আর নেই। নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার করা গিয়েছে। শ্রম সহজলভ্য। অনেক দেশের তুলনায় ব্যয় কম। চিন গোটা ব্যাপারটা জানে বলেই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত বিনিয়োগের পথ খুলবে। অর্থনৈতিক উজ্জ্বলতা বাড়বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement