‘এক সন্তান’ নীতির থেকে সরছে চিন

ধীরে ধীরে শিকল খুলছে চিন। মাও-এর বজ্রমুষ্টি থেকে বেরিয়ে দেঙ জিয়াও পিঙ-এর হাত ধরে বিশ্ব অর্থনীতির মুক্ত বাতাসে এসেছিল চিন। তার পরে তিন দশকের বেশি কেটে গিয়েছে। অবিশ্বাস্য ফলও মিলেছে। আজ চিন দুনিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ১৮:৫৭
Share:

ধীরে ধীরে শিকল খুলছে চিন। মাও-এর বজ্রমুষ্টি থেকে বেরিয়ে দেঙ জিয়াও পিঙ-এর হাত ধরে বিশ্ব অর্থনীতির মুক্ত বাতাসে এসেছিল চিন। তার পরে তিন দশকের বেশি কেটে গিয়েছে। অবিশ্বাস্য ফলও মিলেছে। আজ চিন দুনিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। কোটিপতিদের সংখ্যায় উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। পুঁজিপতিরা আজ ব্রাত্য তো ননই, বরং চিনের কমিউনিস্ট পার্টি তাঁদের দলে নিচ্ছে। এ বার পালা বদলের নতুন পালা । এক সন্তান নীতি থেকে সরে আসছে চিন। এ বছরের শেষেই এই ঘোষণা হতে পারে প্রশাসন সূত্রে খবর।

Advertisement

সর্ববৃহৎ জনসংখ্যার দেশ চিনে এই নীতি চালু হয়েছিল ১৯৮০-তে। যদিও ৫০ এবং ৬০-এর দশকেই সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছিল। বিয়ের বয়স বাড়িয়ে দেওয়া, দু’সন্তানের জন্মের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানো, সন্তানের সংখ্যা কমানোর মতো জন্মের হার কমানোর নানা উপায় ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সে ভাবে সুফল মেলেনি। অবশেষে ১৯৮০ তে শহরাঞ্চলে দম্পতি পিছু একটি সন্তানের কড়া নিয়ম জারি করে চিন। তাতে জন্মনিয়ন্ত্রণের হার কমেছে। তা নিয়ে বুক ফুলিয়ে প্রবল প্রচারও হয়েছে। এ বার সেই নিয়ম থেকে সরে আসতে চলেছে চিন।

কারণ? নিন্দুকেরা বলেন, ঠেলায় পড়ে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এক হিসেব বলছে, ২০৫০-এ চিনের প্রায় ৪৪ কোটি নাগরিকের বয়স ৬০-এর উপরে থাকবে। কর্মক্ষম নাগরিকের সংখ্যা বেশ কমে আসবে। ফলে কাজের লোক পেতে কালঘাম ছুটবে। ২০১৪-য়ই ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে থাকা নাগরিকের সংখ্যা ৩৭ লক্ষ হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে অন্য সমস্যাও। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন জানিয়েছেন, এক সন্তান নীতি প্রয়োগের ফলে দম্পতিদের মধ্যে ছেলে সন্তান হওয়ার দিকে ঝোঁক বেড়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের হিসেব বলছে ১৯৮০ থেকে ২০০০-এর মধ্যে চিনে মেয়ের থেকে ২ কোটি ২০ লক্ষ বেশি ছেলে জন্মেছে। এতে বিপুল সামাজিক সমস্যা শুরু হয়েছে। যুবকদের সঙ্গিনী জোগাড়ের সমস্যা তো আছেই, পাশাপাশি বেড়েছে অপরাধের সংখ্যা। হিসেব বলেছে, অপরাধের বড় অংশের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন যুবকরাই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্ব রাজনীতিতে চিন যে মাঝেমধ্যে অকারণে কড়া অবস্থান নেয় তাও এই সামাজিক সমস্যার অন্য রূপ।

Advertisement

পাশাপাশি অমর্ত্য সেনের মতো অনেকেই তুলেছেন মানবাধিকার, স্বাধীনতার প্রশ্নও। কারণ, শুধু একটি সন্তান বেধে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি চিন। কড়া হাতে এই নীতি প্রয়োগও করেছে। জোর করে গর্ভপাতের ভূরি ভূরি অভিযোগ এসেছে। বেশি দিন নয়, ২০১২ এক মায়ের ছবি নিয়ে বিশ্বে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ছবিতে দেখা যায়, সাত মাসের গর্ভবতী সেই মহিলার জোর করে গর্ভপাত করানো হয়েছে। পাশেই পড়ে আছে সদ্য হত ভ্রূণটি। ২০১১-এ গর্ভপাত করতে গিয়ে এক মহিলার মৃত্যু নিয়ে প্রবল সমালোচিত হয়েছিল চিন। আবার অনেক দম্পতি-র এক মাত্র সন্তান বেশি বয়সে মারা গিয়েছে। সেই বাবা-মায়ের হাহাকারের অসংখ্য কাহিনিও সামনে এসেছে। সব মিলিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছিল। ৬৫ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে প্রবল চর্চাও চলছিল।

দেরি করে হলেও বোধোদয় হয়েছে চিনের। তবে শিকল আলগা করার কাজটা বেশ কয়েক বছর আগেই ধীরে ধীরে শুরু হয়েছিল। ২০১৩-তেই চিনের বেশ কয়েকটি জায়গায় স্বামী বা স্ত্রী কেউ এক জন এক মাত্র সন্তান হলে তাঁদের একাধিক সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলে, সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর প্রথম সন্তান মেয়ে হলে আরও একটি সন্তান নেওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়। এ বার একে বারে এক সন্তান নীতি সরিয়ে ফেলার কথা উঠেছে। যদিও চিন সরকারি ভাবে সে কথা স্বীকার করেনি। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, এর জন্য বেশ কিছু নিয়মের পরিবর্তন করতে হবে। চিনের ‘ন্যাশনাল হেল্থ অ্যান্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং কমিশন’ নতুন নিয়ম নিয়ে কাজ করছে। এ বছরের শেষের দিকে নতুন নিয়মের চূড়ান্ত কাঠামো স্থির হয়ে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement