গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স
গর্ভপাত অবৈধ হতে চলেছে আমেরিকায়। সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি এই মর্মে একটি খসড়া প্রস্তাবে সই করেছেন বলে দাবি আমেরিকার প্রথম সারির একটি সংবাদ সংস্থার। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে পাল্টে যাবে গর্ভপাত সংক্রান্ত সে দেশের প্রায় অর্ধশতক পুরনো আইন।
১৯৭৩-এ ‘রো ভার্সেস ওয়েড’ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন বিচারপতিরা রায় দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকার গর্ভপাত নিষিদ্ধ করতে পারে না। কিছু শর্ত আরোপ করতে পারে মাত্র। এক জন মহিলার নিজের দেহের উপরে একশো শতাংশ নিয়ন্ত্রণ রাখার অধিকার রয়েছে। তাই সরকারি নিষেধাজ্ঞার চোখরাঙানি এড়িয়ে তাঁরা গর্ভপাত করাতেই পারেন। সেই থেকে আমেরিকার প্রতিটি প্রদেশে গর্ভপাতে অনুমতি দেওয়া হয়। সব থেকে কড়া শর্ত রয়েছে টেক্সাসে। সেখানে গর্ভসঞ্চারের ছ’সপ্তাহের পরে আর গর্ভপাত করানো যায় না। কিন্তু ক্যালিফর্নিয়ার মতো প্রদেশে পরিস্থিতি বুঝে যখন হোক গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেওয়া রয়েছে। আমেরিকান সংবাদ সংস্থাটির দাবি, সুপ্রিম কোর্টের খসড়া প্রস্তাবে ১৯৭৩-এর সেই রায় সম্পূর্ণ খারিজ করে বলা হয়েছে, ‘‘কোনও ব্যক্তি মানুষের নয়, গর্ভপাত সম্বন্ধে বলার অধিকার রয়েছে শুধু সরকারের।’’ প্রবল দক্ষিণপন্থী বিচারপতি স্যামুয়েল অ্যালিটোর লেখা এই খসড়া প্রস্তাব গৃহীত হলে আগামী এক মাসের মধ্যে কম পক্ষে ২৬টি প্রদেশে গর্ভপাত সম্পূর্ণ অবৈধ হয়ে যাবে বলে মত আইন বিশেষজ্ঞদের। শুধু তা-ই নয়, চাইলে সেই প্রদেশ থেকে সীমানা পেরিয়ে অন্য প্রদেশে গিয়ে গর্ভপাত করানোর বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে প্রাদেশিক সরকারগুলি।
দিন কয়েক আগেই সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মহিলা কৃষ্ণাঙ্গ বিচারপতি হিসেবে কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসনের নাম মনোনীত করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু এখনও দেশের শীর্ষ আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিই দক্ষিণপন্থী রিপাবলিকান এবং তাঁরা বরাবরই গর্ভপাতকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিরুদ্ধে। ওই দক্ষিণপন্থী বিচারপতিদের মধ্যে অন্তত তিন জন আবার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এই খসড়া প্রস্তাব লিখেছেন যে বিচারপতি স্যামুয়েল অ্যালিটো তাঁকে আবার মনোনীত করেছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও গর্ভপাতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন এবং গর্ভপাত যে অবিলম্বে অবৈধ ঘোষণা করা উচিত, সেই মর্মে একাধিক বক্তৃতাও দিয়েছেন।
আদালতের এই খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ্যে আসার পরে সরব হয়েছেন ডেমোক্র্যাটেরা। আজ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘আদালত যদি সত্যিই (গর্ভপাত বিষয়ে) রো-র সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেয়, তা হলে মহিলাদের অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব এসে পড়বে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপরে। হাউস ও সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি যদি গর্ভপাতের পক্ষে রায় দেন, তা হলে আমার প্রশাসন নতুন আইন আনার জন্য লড়ে যাবে।’’ হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের স্পিকার, প্রবীণ ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি এবং সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘এই রিপোর্ট সত্য হলে, এটি সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম জঘন্য সিদ্ধান্ত হবে। শুধু মহিলাদের নয়, এই সিদ্ধান্ত প্রতিটি দেশবাসীর অধিকার খর্ব করবে। রিপাবলিকানদের নিয়োগ করা বিচারপতিদের এই পদক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করছি।’’ গোটা রিপাবলিকান দলের সমালোচনা করে এই বিবৃতিতে উল্লেখ, ‘‘লিঙ্কন ও আইজ়েনহাওয়ারের দল এখন ট্রাম্পের দলে পর্যবসিত হয়েছে। যে সব রিপাবলিকান সেনেটর ট্রাম্প-পন্থী বিচারপতিদের মনোনয়নে সায় দিয়েছিলেন, আমেরিকার মানুষের কাছে তাঁরা জবাব দিন।’’