নয়া নির্দেশিকায় ক্ষুব্ধ জুটা, মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা

সংবাদপত্রে সোমবার বিজ্ঞাপন দিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে সবাইকে এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছিলেন যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। কিন্তু এ দিন তিনিই ক্যাম্পাসমুখো হলেন না। মাসখানেক ধরে অচলাবস্থা চলছে যাদবপুরে। পুজোর ছুটির পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের জারি করা একটি নির্দেশিকা এ দিন নতুন করে আগুনে ঘি ঢেলেছে। ওই নির্দেশিকায় কড়া ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানোর নিন্দা করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৫
Share:

স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে অভিজিৎ চক্রবর্তীকে নিয়োগের প্রতিবাদে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। সোমবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

সংবাদপত্রে সোমবার বিজ্ঞাপন দিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে সবাইকে এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছিলেন যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। কিন্তু এ দিন তিনিই ক্যাম্পাসমুখো হলেন না।

Advertisement

মাসখানেক ধরে অচলাবস্থা চলছে যাদবপুরে। পুজোর ছুটির পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের জারি করা একটি নির্দেশিকা এ দিন নতুন করে আগুনে ঘি ঢেলেছে। ওই নির্দেশিকায় কড়া ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানোর নিন্দা করা হয়েছে। অচলাবস্থা না কাটলে কর্তৃপক্ষ সেমেস্টার পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হবেন এবং সে ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের শংসাপত্র পেতে দেরি হবে বলেও জানানো হয়েছে।

শিক্ষক সংগঠন জুটা-র মতে, নির্দেশিকার ভাষা অপমানজনক। অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে হবে। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের বক্তব ্য, ওই নির্দেশিকার ভাষা হুমকির মতো। ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে যে ভাবে ছাত্রছাত্রীদের পেটানো হল, তা নিয়ে উপাচার্যের তরফে একটি কথাও নেই। তাই, ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও ক্লাস বয়কটের পথ থেকে সরছেন না তাঁরা। তবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতক স্তরের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমেস্টারের সাপ্লিপেন্টারি পরীক্ষা হওয়ার কথা ১৪ অক্টোবর। সেই পরীক্ষা বয়কট করছেন না পড়ুয়ারা।

Advertisement

এ দিনের ওই নির্দেশিকা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বলেন, “উপাচার্য চাইছেন, সকলে মিলে আলোচনা করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করতে। উনি হয়তো মনে করছেন, এই নির্দেশিকাতেই বরফ গলবে। কিন্তু কে কী ভাবে এর ব্যাখ্যা করবেন, সেটা তাঁদের বিষয়।” প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাইলে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হবে। না হলে আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে না। বেলা ১০টা নাগাদ রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে যান জুটার প্রতিনিধিরা। পরে সংগঠনের সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্ত জানান, নয়া নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জুটা।

উপাচার্য সফল হচ্ছেন না দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে এ দিন তৎপর হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আলোচনার জন্য এ দিন তিনি জুটা-র প্রতিনিধিদের বিধানসভায় ডেকে পাঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু করতে তাঁদের অনুরোধ করেন পার্থবাবু। জুটা-র প্রতিনিধিরাও মন্ত্রীর কাছে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানান। নির্দেশিকাটি কেন আপত্তিকর, পার্থবাবুর কাছে ব্যাখ্যা করেন তাঁরা।

কী আছে নির্দেশিকায়?

১২ অক্টোবর জারি করা ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকে আদালতের নির্দেশ অমান্য করছেন। নির্দেশ অগ্রাহ্য করেই ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অনেকে। এ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা, নির্দেশ অমান্য করায় এবং নিজেদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করায় ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। ইতিমধ্যেই পঠনপাঠনের বেশ কিছু দিন নষ্ট হয়েছে। এ ভাবে চললে সেমেস্টার পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হবে। তাতে ছাত্রছাত্রীদের শংসাপত্র পেতেও দেরি হবে। যার জেরে ছাত্রছাত্রীদের উচ্চতর শিক্ষা বা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হবে বলে ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে ও পড়ুয়াদের অবিলম্বে ক্লাসে ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই নির্দেশিকায়। জুটার বক্তব্য, নির্দেশিকাটি অত্যন্ত অপমানজনক। সংগঠনের সভাপতি কেশব ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এক দিনের জন্যও কর্তব্য অবহেলা করিনি। তেমন কোনও উদ্দেশ্য আমাদের নেই। আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর পক্ষে।”

সরকারি সূত্রের খবর, এ দিনের ওই নির্দেশিকা জারি করতে অভিজিৎবাবুকে সাহায্য করেছেন রাজ্যের অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কর্তা। নির্দেশিকার ভাষা ও বক্তব্য নিয়ে রাজ্য সরকারও বিব্রত। শিক্ষামন্ত্রী এ নিয়ে মন্তব্য না করলেও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, মন্ত্রীরই নির্দেশে উচ্চশিক্ষা সচিব এ দিনই রেজিস্ট্রারকে ডেকে এ নিয়ে কথা বলেছেন। রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, ব্যক্তিগত কারণে বিকাশ ভবনে গিয়েছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটানোই শিক্ষা দফতরের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য। প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলতে রাজি তিনি। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ফেরার আবেদন জানাচ্ছি। জুটাকেও বলেছি, ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফেরাতে।”

মন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও জুটার মতে, উপাচার্যই বর্তমান অচলাবস্থার জন্য দায়ী। তাই এই জট কাটাতে তাঁকেই উদ্যোগী হতে হবে। তবে জুটা-র পক্ষ থেকে এ দিনও জানানো হয়, ছাত্রছাত্রীরা এলে তাঁরাও ক্লাস নেবেন। তবে প্রশাসনিক কাজ তাঁরা করবেন না। তবে ছাত্রছাত্রীরা এখনও অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের দাবিতে অনড়। দাবি না মিটলে ক্লাস বয়কট চলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। পুজোর ছুটির পরে এ দিনই খুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়। এ দিন ক্যাম্পাসের প্রবেশ পথে ছিল পুলিশি পাহারা। ছাত্রছাত্রীদের পরিচয়পত্র বা লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে, বহিরাগতদের নিজের পরিচয় লিখিয়ে অনুমতিপত্র নিয়ে ঢুকতে হয়েছে ভিতরে।

অধিকাংশ পড়ুয়া সোমবার ক্লাস বয়কট করলেও কয়েক জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে এডুকেশন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কম্পিউটর সায়েন্সের একটি করে ক্লাস হয়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতকস্তরের একটি প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসও হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা এ দিনও ক্যাম্পাসের ভিতরে মিছিল করেন এবং পরে রাস্তায় বেরিয়ে যাদবপুরের মোড়ে উপাচার্যের কুশপুতুল পোড়ান। অভিজিৎবাবুকে অপসারণের দাবিতে আবার এ দিন রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ডিএসও। পুলিশ এই ঘটনায় ৭৪ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement