রাজ্যপালের আশ্বাসে খুশি হয়ে শেষ পর্যন্ত উৎসবের মরসুমে ‘আপাতত’ ধর্মঘট তুলে নিলেন ট্যাক্সিচালকেরা। একই সঙ্গে ধর্মঘটীরা জানিয়ে দিলেন, কালীপুজোর মধ্যে তাঁদের দাবি সরকার মেনে না নিলে ফের শুরু হবে আন্দোলন।
পুজোর আগে লাগাতার পাঁচ দিন ধরে ট্যাক্সি-ধর্মঘটে বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। সোমবার ধর্মঘট উঠে যাওয়ায় তাই সরকারও স্বস্তিতে। ধর্মঘট ওঠার পরে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের প্রতিক্রিয়া, “দুর্গাপুজোর আগে ট্যাক্সিচালকদের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা যে শেষ পর্যন্ত গাড়ি চালাতে চেয়েছেন, তাতে আমরা খুশি।”
পুলিশি জুলুম আর ২৪ জন ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ১৮ তারিখ থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন ট্যাক্সিচালকেরা। তাঁদের আন্দোলনের পিছনে ছিল সিটু, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, বিএমএস-সহ বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি। ধর্মঘটের মোকাবিলায় ট্যাক্সির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছিল রাজ্য। পাল্টা ট্যাক্সিচালকেরাও অনড় ছিলেন ধর্মঘটে। ফলে দুর্গাপুজোর ঠিক আগে ট্যাক্সি না মেলায় ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছিল সাধারণ যাত্রীদের। অসুবিধায় পড়ছিলেন হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদহ স্টেশন এবং বিমানবন্দরে আসা যাত্রীরাও।
দু’পক্ষই অনড় থাকায় পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছিল। শেষে সেই জট কাটল রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর হস্তক্ষেপে। এ দিন সন্ধ্যায় সিপিএমের বিধায়ক আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। পরে রাজভবন থেকে বেরিয়ে এসে সিটু নেতা অনাদি সাহু বলেন, “রাজ্যপালকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছি। তিনি রাজ্য সরকারকে আমাদের দাবি বিবেচনা করার কথা বলেছেন। আমরাও তো জানি যে, উৎসবের মরসুমে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। সে কারণেই রাজ্যপালের আশ্বাসে ধর্মঘট আপাতত স্থগিত রাখা হল।”
তবে তিনি জানান, কালীপুজো পর্যন্ত আপাতত ধর্মঘট স্থগিত রাখা হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে ট্যাক্সি চলবে। তার পরেও সরকার ট্যাক্সিচালকদের দাবি বিবেচনা না করলে কালীপুজোর পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
ট্যাক্সি-ধর্মঘট চলার সময়ে বেশ কিছু গাড়িকে বেআইনি ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগে আটক করেছে প্রশাসন। যার প্রতিবাদে এ দিনই দুপুর বারোটা নাগাদ পিভিডি-তে বিক্ষোভ দেখান ট্যাক্সিচালকেরা। সেখানেই অনাদিবাবু জানান, তিন-চার দিন ধরে পিভিডি-র তরফ থেকে নতুন করে দমন-নীতি শুরু হয়েছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে কোনও কারণ ছাড়াই ট্যাক্সি তুলে নিয়ে আটক করা হয়েছে। প্রায় ৪০৪ জন ট্যাক্সিচালককে লাইসেন্স বাতিল করার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। অনাদিবাবুর অভিযোগ “ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন প্রায় এক লক্ষ মানুষ। বেছে বেছে ৪০৪টি গাড়িকেই কেন নোটিস পাঠানো হল? ট্যাক্সি আটক করা হচ্ছে কোন যুক্তিতে?”
রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পরে অনাদিবাবু ফের বলেন, “আমরা আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখছি। সরকারের কাছে আবেদন, আটক করা ট্যাক্সিগুলি ছেড়ে দেওয়া হোক। চিঠিগুলিও যেন প্রত্যাহার করা হয়।”