সিএএ এবং এনআরসির বিরোধিতায় যা চলছে দেশ জুড়ে, তা দেখার পরে বিজেপি সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা— মত মমতার। ছবি: পিটিআই।
এক দিকে সিএএ বিরোধী বার্তা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে। অন্য দিকে, সুর কিছুটা নরম বৃহস্পতিবারের ‘গণভোট’ মন্তব্য প্রসঙ্গে। দলীয় বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শুক্রবার এই অবস্থানই নিলেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) এবং এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি)-র বিরোধিতা যেমন চলছিল, তেমনই যে লাগাতার চালিয়ে যেতে হবে, এ দিনের বৈঠকে সে কথা দলকে জানিয়ে দিয়েছেন নেত্রী। তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত সব বিধায়ক ও সাংসদকে এ দিনের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। ডাকা হয়েছিল জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্বকেও। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানান সে কথা। তবে এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের প্রতি মমতার আক্রমণের সুর ছিল অপেক্ষাকৃত নরম। অমিত শাহকে নিয়ে সে ভাবে কোনও মন্তব্য এ দিন করেননি তিনি। আর প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্দেশে তাঁর আবেদন— ‘‘আপনি গোটা দেশের প্রধানমন্ত্রী, আপনি শুধু বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নন। আপনাকে আমি অনুরোধ করব, দয়া করে সিএএ এবং এনআরসি বাতিল করুন।’’
সিএএ এবং এনআরসির বিরোধিতায় যা চলছে দেশ জুড়ে, তা দেখার পরে বিজেপি সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা— মত মমতার। ‘জেদাজেদি করবেন না’, বিজেপির উদ্দেশে বার্তা মমতার। তিনি বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে গণআন্দোলনের চাপে মাথা নত করতে হয়।’’ তার পরেই বলেন, ‘‘আচ্ছা মাথা নত করতে হবে না, শুধু বলে দিন সিএএ বাতিল।’’
আরও পড়ুন: ‘নিরপেক্ষ’ সংস্থার পর্যবেক্ষণে গণভোটের দাবি তুললেন মমতা
তবে বৃহস্পতিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে যে সুরে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে সুর ছিল তার চেয়ে আলাদা। সিএএ-র পক্ষে ক’জন আর বিপক্ষে ক’জন, তা পরখ করে দেখার জন্য মমতা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ‘‘দেশে একটা গণভোট হয়ে যাক।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জ বা মানবাধিকার কমিশনের মতো সংস্থাকে দিয়ে গণভোট করানো হোক— এমনও বলতে শোনা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। কিন্তু শুক্রবার মমতা বলেছেন যে, তাঁর মন্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জকে দিয়ে গণভোট করানোর কথা তিনি বলেননি বলে মমতা এ দিন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম দেশের এক্সপার্টদের নিয়ে করতে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জও সেটা দেখুক— এটুকুই তিনি বলেছিলেন, ব্যাখ্যা মুখ্যমন্ত্রীর।
আরও পড়ুন: রোজভ্যালি নিয়ে হঠাৎ তৎপর সিবিআই, জিজ্ঞাসাবাদ গৌতমমোহনকে
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, ২৩ ডিসেম্বর কলকাতা বাদ দিয়ে রাজ্যের সব মহকুমা সদরে মিছিল-সভা করবে তৃণমূল। তার পরের দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর ফের কলকাতায় মিছিল হবে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সিএএ এবং এনআরসি বিরোধিতায় কলকাতা ও হাওড়া জুড়ে তিনটে মিছিল করেছেন মমতা। কিন্তু ২৪ তারিখ স্বামী বিবেকানন্দের ভিটে থেকে বেলেঘাটার গাঁধী ভবন পর্যন্ত মিছিলের ডাক দেওয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ তার আগের দিন অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মিছিল করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডা।
২৬ ডিসেম্বর দমদম ও কামারহাটি অঞ্চলে এবং ২৭ ডিসেম্বর সিঙ্গুর থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত মিছিল হবে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন। আর ২৮ ডিসেম্বর রাজ্যের প্রত্যেকটি বিধানসভা কেন্দ্রে তিনি দলকে পথে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস। মমতা বলেন, ‘‘এ বারের প্রতিষ্ঠা দিবসকে আমরা নাগরিকদের উদ্দেশে উৎসর্গ করছি। নাগরিক অধিকার দিবস হিসেবে পালিত হবে।’’