শোকার্ত: লক্ষ্মী রাহার পরিজন। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
ফের ডেঙ্গি আক্রান্ত এক মহিলার মৃত্যু হল হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। এই নিয়ে এ বছর হাবড়াতে ডেঙ্গিতে চার জন মারা গেলেন। তবে কারও ক্ষেত্রেই মৃত্যুর শংসাপত্রে ‘ডেঙ্গি’ লেখা হয়নি। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী রাহার (৫৪) শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে ‘অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোম’। তবে বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল বলে মানছেন হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষ।
এই মৃত্যুর পরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে এ দিন হাসপাতালের এক চিকিৎসককে নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। রোগীর আত্মীয়েরা বিক্ষোভ দেখান হাসপাতালে। ওই ডাক্তার অবশ্য থানায় অভিযোগ জানাননি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, যাঁরা চিকিৎসককে নিগ্রহে জড়িত, তাঁরা পরে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়নি। হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন চারেক আগে জ্বরে আক্রান্ত হন হাবড়ার কামারথুবা সপ্তপল্লি এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী। জ্বরের সঙ্গে বমি-পায়খানাও হচ্ছিল। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানো হয়। বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষাও হয়। সেখানে ডেঙ্গি ধরা পড়ে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীর স্বামী প্রভাস।
পরিস্থিতি জটিল হতে থাকায় লক্ষ্মীকে বুধবার ভর্তি করানো হয় হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। প্রভাসের দাবি, সকালে স্নানের পরে লক্ষ্মীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর বাড়তে থাকে। কর্তব্যরত চিকিৎসককে বাড়ির লোকজন অনুরোধ করেন, তিনি যেন এখনই একবার দেখেন রোগিণীকে। কিন্তু অভিযোগ, চিকিৎসক সে কথা শোনেননি। বরং বলেন, ‘‘সিরিয়াল এলে তবেই দেখব।’’
এর কিছু ক্ষণের মধ্যে লক্ষ্মীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। অক্সিজেন দেওয়া হলেও খানিক ক্ষণের মধ্যেই মারা যান তিনি।
এর পরেই রোগীর বাড়ির লোকজন উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। চিকিৎসককে সামনে পেয়ে চড়-থাপ্পড় মারা হয়, ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ এসে তিন জনকে আটক করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ওই চিকিৎসক অবশ্য বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি। হাসপাতালের একটি সূত্র জানাচ্ছে, চিকিৎসক এবং রোগীর আত্মীয়েরা থানায় যান। সেখানে ক্ষমা চেয়ে নেন রোগীর পরিবারের লোকজন। বলেন, উত্তেজনার বশে এমন ঘটে গিয়েছে। পুলিশের কাছে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাননি ওই চিকিৎসক। চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমি মানবিকতার জন্যই ওর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করিনি।’’
হাসপাতালের সুপার চিকিৎসায় গাফিলতির কথা মানছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সকালেও ডাক্তার ওঁকে দু’বার দেখেছিলেন। শ্বাসকষ্টের জন্য অক্সিজেন, নেবুলাইজার দেওয়া হয়।’’ সুপার বলেন, ‘‘বছর তেরোর ডেঙ্গি আক্রান্ত এক কিশোরের অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়ে পড়ায় চিকিৎসক সে দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু একে চিকিৎসায় গাফিলতি বলা চলে না।’’ লক্ষ্মীকে চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি বলে তাঁর দাবি। সুপার মানছেন, বাইরে থেকে করানো রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল লক্ষ্মীর। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকেও রক্ত পরীক্ষা হয়। সেই রিপোর্ট এসে পৌঁছনোর আগেই মারা গেলেন লক্ষ্মী।