ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। কল্যাণীতে মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র
ভর্তি হয়েছেন রবীন্দ্রভারতীতে। কিন্তু ডিগ্রি মিলবে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একটি অবশ্যই রবীন্দ্রভারতীর। অন্যটি হতে পারে আমেরিকার কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এ বার এ দেশের ছাত্রছাত্রীদের ‘দ্বৈত ডিগ্রি’ (একটি দেশের অন্যটি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের) পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
মঙ্গলবার কল্যাণীতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)-এর চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্ম়ৃতি ইরানি এই দ্বৈত ডিগ্রির বিষয়টি ঘোষণা করেন। মন্ত্রী জানান, শুধু ডিগ্রির সার্টিফিকেটই নয়, এ দেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক স্থাপিত হবে, পড়ুয়ারা সেখানেও পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। তার আগে ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ‘মউ’ (মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং) সই হতে হবে। স্মৃতির দাবি, ‘‘এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী।’’
স্মৃতি জানাচ্ছেন, ধরা যাক কোনও পড়ুয়া দুটি ‘সেমেস্টার’ এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেন। পরবর্তী দুটি ‘সেমেস্টার’ তিনি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়ার সুযোগ পাবেন। তাতে পড়ুয়াটির সামনে বিশ্ব খুলে যাবে। জানার সুযোগ অনেকটাই বেড়ে যাবে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা শিক্ষকদের সান্নিধ্যও পাবেন তিনি। মূল শংসাপত্রটি মিলবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাতে বিদেশের সহযোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এবং সিলমোহর থাকবে। মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক সূত্রের খবর, এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে দীর্ঘদিনই দাবি উঠেছে। তার ভিত্তিতে
গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বৈঠকে বসেন মন্ত্রকের কর্তারা। কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত দেশের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদেরও সেই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। স্মৃতি ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সেখানেই দ্বৈত ডিগ্রির বিষয়টিতে সিলমোহর পড়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষাবিদেরা কী বলছেন?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস মনে করেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে এ দেশের পড়ুয়াদের কাছে শিক্ষার নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘ভাল দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাঁটছড়া বাঁধলে শিক্ষার মান যে বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।’’
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হিউম্যানিটিজ-এর অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তী জানান, ভারতের কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কিছু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ধরনের সম্পর্ক আছে, যার নাম ‘টুইনিং’। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় দু’টির সমসংখ্যক ছাত্রছাত্রী একে-অন্যের ক্যাম্পাসে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পড়াশোনা করেন। সেখানে তাঁরা যে ‘ক্রেডিট’ বা নম্বর পান, সেটাও তাঁদের পরীক্ষার ফলে যোগ হয়। কলকাতার যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন বোঝাপড়া আছে। তবে দ্বৈত ডিগ্রির বিষয়টি পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু থাকলেও, এ দেশে তা এখনও শুরু হয়নি। স্বপনবাবুর মতে, ‘‘এতে নীতিগত আপত্তির কোনও কারণ নেই। তবে আগে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের মধ্যে এ ধরনের বোঝাপড়া চালু করতে পারে। তার সুযোগ-সম্ভাবনা অনেক বেশি।’’
তবে এই ‘দ্বৈত ডিগ্রি’ ব্যবস্থার কিছু ক্ষতিকর দিকের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষাবিদেরা। তাঁদের মতে, এতে দেশের নিম্নমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু মাত্র অর্থ রোজগারের জন্য বিদেশের ওঁচা কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলে, তাতে পড়ুয়াদের ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। আবার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পড়ুয়াদের কাছে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নিজেদের যোগসূত্র জাহির করে ‘লাগামছাড়া’ কোর্স ফি ধার্য করতে পারে। শিক্ষাবিদদের দাওয়াই, সে ক্ষেত্রে ইউজিসি-র নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
বৃহস্পতিবার দিল্লির বৈঠকে ছিলেন, ‘আইসার’-কলকাতার অধিকর্তা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁর আশ্বাস, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ইউজিসি-কে জানাতে হবে যে, তাদের সঙ্গে বিদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মউ’ রয়েছে। তারা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ ভাবে দ্বৈত ডিগ্রি দিতে চায়। তার পরে ইউজিসি বিদেশের সেই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিশদে খোঁজ নেবে। তারা সন্তুষ্ট হলে, তবেই মিলবে ছাড়পত্র।