মঙ্গলবার, নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
তুষারকান্তি ‘তৃণমূল’ হয়েছিলেন। তুষারকান্তি এ বার ‘বিজেপি’ হলেন।
বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করা কংগ্রেসের প্রতীকে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। ভোটে জেতার মাসখানেকের মধ্যেই তিনি তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের মঞ্চে উঠে শিবির বদলান। এ বার লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে মোদী সরকার ফিরতেই দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে মঙ্গলবার তিনি সেখানে নিজের নাম লেখালেন। বিজেপির রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীর পাশে বসলেন। তাঁর বারবার এই শিবির বদল করা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে চর্চা।
তুষারবাবু দলবদল করতে পারেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই। মঙ্গলবার সেটাই সত্যি হল। যদিও তৃণমূলে এর কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি দলীয় নেতৃত্বের। বিজেপিতে যোগ দিয়ে তুষারবাবু বলেন, ‘‘আবার পুরনো দলে ফিরে এলাম। তৃণমূল উন্নয়ন করেনি। উল্টে জনসমর্থন হারিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই দলে থাকার কোনও যুক্তি নেই।’’
তৃণমূল প্রার্থী শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে বিষ্ণুপুরে জয়ী হয়েছিলে তুষারবাবু। তিনি পরে তৃণমূল-শিবিরে এলেও শ্যামবাবুর বিরোধী বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত রয়ে গিয়েছেন। এই দুই নেতার দ্বন্দ্বের ও তাঁদের অনুগামীদের সংঘাত বহু বার প্রকাশ্যে এসেছে। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব পর্যন্ত তাঁদের এককাট্টা করার বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তুষারবাবুর এ দিন ‘বিজেপি’-যোগের খবর পেয়ে শ্যামবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি তৃণমূলে থাকলেন, কি থাকলেন না, তাতে কিছু এসে যায় না।”
তবে বছর খানেক ধরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ওঠা-বসা ছিল তুষারবাবুর। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামবাবুর বিক্ষুব্ধ কয়েকজন কাউন্সিলরও তুষারবাবুর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। তুষারবাবুর বিজেপিতে চলে যাওয়ায় তাঁর ঘনিষ্ঠেরাও এ বার দল পরিবর্তন করেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
যদিও শ্যামবাবু দাবি করছেন, “আমাদের দলের কোনও কাউন্সিলর বা নেতাকে বিজেপিতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তুষারবাবুর নেই।”
তুষারবাবুর এই শিবির পরিবর্তনের কারণ নিয়ে নানা মত ঘুরছে। তৃণমূলের একাংশের মতে, লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের এই জেলার আওতায় থাকা ১২টি বিধানসভাতেই এগিয়ে বিজেপি। বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপি ‘লিড’ পেয়েছে ২২ হাজার ৮১৮টি ভোটের। এই পরিস্থিতিতে আগামী বিধানসভা ভোটে নিজের টিকিট নিশ্চিত করতে তুষারবাবু তড়িঘড়ি শিবির বদল করলেন বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের।
আবার তুষারবাবুর অনুগামীদের দাবি, তৃণমূলে থেকেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ছিলেন বিধায়ক। এমনকি, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নানা জায়গায় তাঁর বিভিন্ন দাবি দাওয়াও মানা হচ্ছিল না। তাই চলে গিয়েছেন।
বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই দিয়েছেন, যাঁরা দল থেকে বেরিয়ে যেতে চান, তাঁরা যেতে পারেন। কিন্তু দলে থেকে কেউ বেইমানি করবে এটা আমরা বরদাস্ত করব না। তুষারকান্তিবাবু বিজেপিতে গিয়েছেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।” বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তুষারকান্তিবাবু বহুবার দল পরিবর্তন করেছেন। জনসঙ্ঘ থেকে শুরু করে কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল সব দলেই তাঁকে দেখা গিয়েছে। এ বার ফের বিজেপি হলেন। তাঁকে নিয়ে যা বলার রাজ্য নেতৃত্ব বলবে।”