প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ডেঙ্গি পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই পুজোর সময়েও ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই সময়ে জেলাস্তরের সর্বস্তরের আধিকারিক এবং ডেঙ্গি মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত সব কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বুধবার সব জেলাশাসক, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, কলকাতার পুর কমিশনার এবং পুর, পূর্ত, পঞ্চায়েত, নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ এবং স্বাস্থ্য দফতরের সচিবদের সঙ্গে বসে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। প্রশাসনের খবর, ১৫ এবং ১৬ অক্টোবর সব গ্রাম, পুরসভার ওয়ার্ড, হাসপাতাল, স্কুল, সব সরকারি এলাকায় বিশেষ স্বচ্ছতা অভিযান চালানো হবে। বিশেষ নজর দেওয়া হবে মশার লার্ভা জন্মানোর মতো জায়গাগুলিতে।
রাজ্যের প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হচ্ছে। কোনও সময় এক দিনে একাধিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। বুধবার দু’জন ডেঙ্গি আক্রান্ত মারা গিয়েছেন। একজন বহরমপুরের অন্তরা চট্টোপাধ্যায় (৪৩), অন্য জন চাকদহের রাজেশ বসু (৩০)। এ নিয়ে চলতি মরসুমে অর্থাৎ গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৬২ জনের মৃত্যু হল ডেঙ্গিতে।
জানা যাচ্ছে, এ দিন বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে অন্তরার। তিনি বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। তার পরে তাঁকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে গত ৯ অক্টোবর বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল রাজেশকে। চিকিৎসকেরা জানান, সেপসিস ও কিডনি ফেলিয়োর হচ্ছিল ওই যুবকের। সব রকমের চেষ্টা করা হলেও এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রশাসনের কাজ, স্বচ্ছতা এবং সচেতনতা প্রসারের সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী, আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, বাজার কমিটি, বণিকসভা, আবাসন কর্তৃপক্ষ এবং স্কুল পড়ুয়াদেরও। সেগুলির ছবি পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে। রেলের মতো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাগুলিকেও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। নবান্নের সিদ্ধান্ত, ডেঙ্গি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, এসডিও, বিডিও এবং অন্য কর্মী-আধিকারিক, যাঁরা ডেঙ্গি মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের ছুটি বাতিল থাকবে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, দুই বর্ধমান, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলায় ডেঙ্গির মাত্রা তুলনায় বেশি। ফলে সেই জায়গাগুলি বাড়তি নজরে রাখা হচ্ছে।
নবান্নের খবর, ডেঙ্গি মোকাবিলায় ‘কী করিতে হইবে’ সূচক নির্দেশিকা (এসওপি) শীঘ্রই স্থির করে দেবে রাজ্য। যা মেনে পদক্ষেপ করবেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। নির্দেশিকা পাঠানো হবে পুজো কমিটিগুলিকেও। পুজোর ছুটির মধ্যেও চলবে জেলা এবং রাজ্যস্তরের কন্ট্রোল রুম। পর্যটনের এলাকাগুলি আবর্জনামুক্ত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নবান্নের বার্তা, ডেঙ্গি কবলিত এলাকাগুলিতে ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালাতে হবে প্রশাসনকে। সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি জেলা স্তরের নজরদারি দলগুলিকেও সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। সঙ্গে বলা হয়েছে, ডেঙ্গি চিকিৎসায় মেনে চলতে হবে রাজ্যের নির্দেশিকাও।