কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ফর্ম এখন এ রকমই। নিজস্ব চিত্র
বিদায় দেওয়ার সময় আলোচনা-বিতর্ক-প্রচার হয়েছিল প্রচুর। কিন্তু ফিরিয়ে আনার সময় তেমন হইচই হয়নি। সে যে ফিরে এসেছে, এখন তা প্রকট হওয়ায় শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৬ বছর আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির ফর্মে আবেদনকারী পড়ুয়াকে ধর্মের উল্লেখ করতে হবে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসে, ২০০৮-০৯ নাগাদ কর্তৃপক্ষ সেই সিদ্ধান্তের বদল ঘটিয়েছিলেন। এখন ভর্তির ক্ষেত্রে ধর্ম উল্লেখ করতে হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ‘আদার’ বা অন্যান্য লেখারও সংস্থান রয়েছে।
ভর্তির আবেদনপত্রে ধর্মের উল্লেখ বন্ধ করা হোক, ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটে এই প্রস্তাব পেশ করেন অন্যতম সদস্য ও চিকিৎসক আবীরলাল মুখোপাধ্যায়। বিষয়টি বাস্তবায়িত করার জন্য একটি কমিটি গড়া হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জেরে অশান্ত হয়ে উঠেছিল কলকাতাও। তার কিছু দিন পরে সেই কমিটি রিপোর্টে বলেছিল, কোনও পরিস্থিতিতেই কোনও ছাত্র বা ছাত্রীকে তাঁর ধর্ম দিয়ে চিহ্নিত করা চলে না। এটা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধী। এই ধরনের তথ্য পড়ুয়ার কাছে না-চাওয়াই বিধেয়। ১৯৯৩-এর ২৯ জানুয়ারি সেনেট বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভর্তির আবেদনপত্রে ধর্মের উল্লেখ থাকবে না। সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক এবং সেনেট-সদস্য অনিল বিশ্বাস সেই বৈঠকে বলেছিলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকেও ভর্তির ফর্মে ধর্মের উল্লেখ বন্ধ করা দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক রবিবার জানান, বছর পনেরো এই পদ্ধতিতেই আবেদন করা যেত। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছিল। ২০০৫-এ দেশের মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত অবস্থান খতিয়ে দেখতে তৈরি হয়েছিল সাচার কমিটি। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম পড়ুয়াদের সম্পর্কেও তথ্য জানতে চায়। কিন্তু তার বেশ কিছু বছর আগেই ভর্তির ফর্মে পড়ুয়াদের ধর্মীয় পরিচয় জানানো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই সেই সময় ওই তথ্য দিতে খুবই অসুবিধা হয়। তা ছাড়া সংখ্যালঘুদের বেশ কিছু মেধাবৃত্তি থাকে। সেই সব ক্ষেত্রেও তথ্যের চাহিদা পূরণে অসুবিধা হচ্ছিল। এই সব দিক বিবেচনা করে আবার নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। ‘‘১৯৯৩ সালে ধর্মের উল্লেখ তুলে দেওয়ার বিষয়টি যতটা প্রচার পেয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ততটা প্রচার পায়নি,’’ বলেন ওই আধিকারিক।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন এমটেক ও হোম সায়েন্স পাঠ্যক্রমে ভর্তি চলছে। অনলাইনে এই ভর্তির ফর্মে ধর্ম ‘কলাম’ বা স্তম্ভ আছে। আবেদনকারীরা তাঁদের ধর্ম জানাতে পারেন। তবে ‘আদার’ বা ‘অন্যান্য’-এর বিকল্পও আছে। হোম সায়েন্স বিভাগে ভর্তির ফর্মে ধর্মের পাশে লেখা ‘ফর স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনটারেস্ট অনলি’ (নিছক তথ্য-পরিসংখ্যানের খাতিরে)। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, বিভিন্ন কলেজে ধর্মের জায়গায় মানবতা, ঈশ্বর অবিশ্বাসী, নাস্তিক ইত্যাদি লেখা নিয়ে হইচই চলছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু ধর্ম কথাটি তুলে দেওয়ার কথা ভেবেছিল গত শতাব্দীতেই।