ওই পড়ুয়ারা যা করছে, সেটা অপরাধ: ত্রিপাঠী

লেখাপড়ার বদলে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে মেতে ওঠাটা ‘ভাল লক্ষণ নয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন কয়েক দিন আগে। বুধবার রোগের ‘লক্ষণ’-এ আটকে না-থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সাম্প্রতিক আন্দোলনকে ‘ক্রাইম’ বা ‘অপরাধ’ বলে চিহ্নিত করলেন আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৭
Share:

লেখাপড়ার বদলে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে মেতে ওঠাটা ‘ভাল লক্ষণ নয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন কয়েক দিন আগে। বুধবার রোগের ‘লক্ষণ’-এ আটকে না-থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সাম্প্রতিক আন্দোলনকে ‘ক্রাইম’ বা ‘অপরাধ’ বলে চিহ্নিত করলেন আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

Advertisement

শনিবার থেকে বুধবার, পাঁচ দিনে রাজ্যপালের ক্ষোভের মাত্রা কী ভাবে বেড়েছে, তাঁর এ দিনের মন্তব্যে সেটা পরিষ্কার। শনিবার প্রেসিডেন্সির সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে আচার্য-রাজ্যপাল বলেছিলেন ‘‘ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আসে। আন্দোলন করতে নয়। এটা ভাল লক্ষণ নয়।’’ আর বুধবার দুপুরে কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলের একটি অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আসে। আন্দোলন করতে নয়। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করা তাদের কাজ নয়। তারা যেটা করছে, সেটা একটা ক্রাইম।’’

পরের পর শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রেসিডেন্সি ছেড়ে চলে যাওয়ায় পঠনপাঠনে ক্ষতির বিষয়টিকে সামনে রেখে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ আন্দোলন শুরু করেন। গত শুক্রবার থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে গোলমাল বাড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ঘিরে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। সেখানে কয়েক জন ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরেই উপাচার্যকে ঘেরাও করা হয়। শিক্ষক বিদায় ছাড়াও প্রেসিডেন্সির অন্য বেশ কিছু বিষয়কে সামনে রেখে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সরব হন পড়ুয়াদের একাংশ। উপাচার্যের ঘরের ভিতরে টেবিলে উঠে অভব্য আচরণ করেন কেউ কেউ। অশালীন পোশাক পরে বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগও ওঠে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সব স্তর থেকে ওই উচ্ছৃঙ্খল আচরণের নিন্দা করা হয়। সেই ঘটনার পরের দিন, শনিবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াননি রাজ্যপালও। আন্দোলনের পদ্ধতি নিয়ে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন ছাত্রছাত্রীরা। তবে তাঁরা আন্দোলনের পথ ছাড়ছেন না বলে জানিয়ে দেন। বুধবারেও তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে মৌনী মিছিল করেন। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেন।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল এ দিন যে-ভাবে সরাসরি ওই আন্দোলনকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করলেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ। আচার্য-রাজ্যপালের ওই মন্তব্যের পরে সরব হন আন্দোলনকারীরাও। তাঁদের তরফে প্রান্তিক বসু বলেন, ‘‘রাজ্যপালের মতো ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য লজ্জাজনক। ওঁর এই বক্তব্য গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে।’’

আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আলোচনার রাস্তা থেকে সরে আসার অভিযোগও উঠেছে। এত দিন তাঁদের অভিযোগ ছিল, উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চান না। এ বার সেই অভিযোগই ঘুরে এল আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দিকে। কারণ, একের পর এক কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা কমিটির সঙ্গে ‘মৌখিক’ আলোচনার পথ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। প্রান্তিক জানান, আলোচনা কমিটি লিখিত ভাবে কিছু দিলে তার উত্তর দেওয়া হবে। কিন্তু মৌখিক ভাবে তাঁদের তরফে কিছুই করা হবে না।

শুক্র-শনিবারের গোলমাল ও টানা বিক্ষোভের পরে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান তিনি। কিন্তু তাঁর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। ওই দিনই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছ’টি বিভাগের প্রধান ও ডিন অব স্টুডেন্টসকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দেন উপাচার্য। সাত দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট দেওয়ার কথাও বলেন অনুরাধাদেবী। কিন্তু রেজিস্ট্রারকে ছাড়া তাঁরা ওই কমিটির সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি নন বলে পড়ুয়ারা জানিয়ে দেন।

সেই দাবি মেনে নিয়ে বুধবার রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারকে ওই কমিটিতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তার পরেও কোনও আলোচনা শুরু করা যায়নি। দুপুরে পড়ুয়াদের জন্য অপেক্ষা করা হলেও তাঁদের পক্ষ থেকে কেউ আলোচনায় যোগ দেননি। দেবজ্যোতিবাবু এ দিন বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের দাবি মেনে উপাচার্য আমাকে কমিটিতে নিয়ে এসেছেন। তার পরেও পড়ুয়ারা আলোচনায় আসছে না কেন, বোঝা যাচ্ছে না।’’

কী বলছেন পড়ুয়ারা?

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে প্রান্তিক বলেন, ‘‘আমরা মৌখিক ভাবে কিছুই বলব না।’’ আলোচনায় যোগ না-দিয়ে কয়েকশো পড়ুয়া এ দিনও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রথমে প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাস এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মৌনী মিছিল করেন। ২টো নাগাদ মিনিট পাঁচেকের জন্য কলেজ স্ট্রিটে বসে পড়েন তাঁরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সেখানে স্লোগান দেওয়া হয়। তার পরে ছাত্রছাত্রীরা প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাসে ফিরে গেলেও কোনও ভাবেই সদ্য গড়া কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাননি।

বিক্ষোভের পদ্ধতি নিয়ে ভুল কবুল করে দুঃখপ্রকাশের পরেও পড়ুয়ারা এ ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন শিবিরে আবার ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে সব থেকে কঠোর অবস্থান যে খোদ আচার্য-রাজ্যপালই নিচ্ছেন, দুপুরে তাঁর মন্তব্যে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement