আমোদপুরে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।
দুর্গাপুজো সাধারণত শরৎকালেই হয়ে থাকে। কিন্তু ভরা গ্রীষ্মে দুর্গাপুজো হয় না বললেই চলে। কিন্তু আমোদপুরে ঢুকলেই সেই ধারণা ভুল প্রামাণিত হবে। প্রতি বছর এই সময় আমোদপুরের জয়দুর্গা পুজোকে ঘিরে উৎসবের আমেজে মাতে ওঠে সংলগ্ন ২০-২৫টি গ্রামের মানুষজন। ভোটের মাঝে উৎসব হলেও তাতে উৎসাহের খামতি নেই। বরং ম্লান হয়ে গিয়েছে ভোটপরবর্তী ফলাফলের আলাপ আলোচনাও।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ওই পুজো। আজ বৃহস্পতিবার অষ্টমী। প্রায় ১৮০ বছর আগে আমোদপুর হাটতলায় জয়দুর্গা পুজোর সূচনা হয়। বর্তমানে পুজোটির দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি। মূলত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তায় পুজোর খরচ নির্বাহ হয়। এই পুজোয় রয়েছে বেশ কিছু নজরকাড়া বৈশিষ্ট্য। প্রতিমাতে রয়েছে অভিনবত্ব। শরৎকালে দশভুজার পরিবর্তে মেঘবরণ দেবী এখানে চতুর্ভুজা। সিংহবাহিনী দেবীর চার হাতে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, তীর ও ধনুক। তাঁর ডান দিকে লক্ষ্মী ও জয়া। বাঁ দিকে সরস্বতী ও বিজয়া। পায়ের তলায় মহাদেব, নারায়ণ, ব্রহ্মা এবং ইন্দ্র। মাথার উপরে ললিতা, বিশাখা, হনুমান ও গরু। চার দিনের পুজো শেষ হয় ঘট বিসর্জনের মাধ্যমে। কিন্তু মূর্তি থেকে যায় বছরভর। এই পুজো কমিটির সম্পাদক মিহিরলাল মণ্ডল বলেন, “শরৎকালীন পুজোর এক মাস আগে মূর্তি বিসর্জন হয়। তার পর সেই কাঠামোতেই গড়ে তোলা হয় শরৎকালীন দেবী প্রতিমা।”
বছর ৪৫ ধরে পুজো করছেন ৬৭ বছরের আনন্দগোপাল ভট্টাচার্য। তাঁর জানান, বৈশাখের জাহ্নবী তিথিতে হয় বলে এই পুজোকে বলা হয় জাহ্নবী দুর্গাপুজো। এ দিকে, শারদোৎসবের মতোই এই পুজোকে ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গৃহবধূ রীতা সেন, বাসন্তী সাহা বলেন, “আমরা বছরে দু’বার পুজোর আনন্দ উপভোগ করি। শরতের পুজোর মতোই গ্রীষ্মকালের এই পুজোতেও আত্মীয়সজন আসেন, নাড়ু, মুড়কি বানানো হয়। নতুন জামাকাপড়ও কেনা হয়।” পিছিয়ে নেই খুদেরাও। চতুর্থ শ্রেণির রচনা পাল, ষষ্ঠ শ্রেণির বৃষ্টি হাটি, সপ্তম শ্রেণির সুমন পালরা বলে, “এই সময় দোকানে বাজি-পটকা থাকে না। তাই আমরা শরৎকালের পুজোর সময় কেনা বাজি এখনকার জন্য সরিয়ে রাখি। স্কুল ছুটি থাক বা না থাক এই পাঁচ দিন পড়াশোনার কোনও পাট থাকে না।” শুধু আমোদপুর নয়, এই পুজো ঘিরে খুশির হাওয়া বয়ে যায় পাশের গ্রামগুলিতেও। দৈনিক প্রায় হবাজার দুয়েক মানুষ ভিড় জমান পুজো মণ্ডপে। ঈশ্বরপুরের মোহন মুখোপাধ্যায়, ভগবতীপুরের নিখিল চক্রবর্তীদের কথায়, “আমরা প্রতি ছ-মাস অন্তর আগমনী সুর শুনতে পাই।” পুজো কমিটির সভাপতি অসিতবরণ দে বলেন, “এক সময় অষ্টমীর দিন এই পুজোয় প্রায় ৮ হাজার মানুষের পঙ্ক্তি ভোজ হত। এখন অর্থাভাবে তা বন্ধ হওয়ার মুখে। তবুও মানুষ জন সেদিনের সেই স্মৃতিতে ভর করে আজও মণ্ডপে আসেন। মানুষের উৎসাহের জন্যই টিকে রয়েছে এই পুজো।”