জল আনতে হাঁটতে হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার। ইলামবাজারের গ্রামে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কোনও মতে হাঁটুজলে স্নান ও গৃহস্থালির কাজকর্ম করতেন তাঁরা। গবাদি পশুদের চার কিলোমিটার দূরে পাশের গ্রামে নিয়ে যেতেন ওই বাসিন্দারা। এ বার তাঁদের নিজের গ্রামের দু’টি পুকুর আর একটি ডোবা শুকিয়ে কাঠ। নির্ভর করতে হচ্ছে পাশের গ্রামের উপর। কখনও আড়াই কিলোমিটার তো কখনও চার কিলোমিটার পথ উজিয়ে যেতে হয়। গরমের এই প্রচণ্ড দাবদাহে এমনই অবস্থা ইলামবাজারের জঙ্গলমহলের আদিবাসী এলাকার বাসিন্দাদের। তবে মন্দের ভাল, পানীয় জলের জন্য রয়েছে একটি মাত্র সাব-মার্সিবল পাম্প। আর তা থেকেই শতাধিক পরিবারের চলছে নিত্য দিনের কাজ। অবিলম্বে পানীয় জলের জন্য ভাঙা নলকূপের মেরামতি-সহ বিকল্প জলের উৎস এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা।
ইলামবাজার পঞ্চায়েতের জঙ্গলমহলের একাধিক আদিবাসী পাড়ায় এই জলকষ্ট দেখা দেওয়ায় ভোট-পরবর্তী ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বাসিন্দাদের। চৌপাহাড়ি জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় কম করে আট থেকে ন’টি আদিবাসী পাড়া রয়েছে। শতাধিক বাসিন্দা থাকেন ওই সমস্ত পাড়ায়। জলকষ্টের সমস্যা কমবেশি রয়েছে প্রায় সব এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভরা গ্রীষ্মে জঙ্গলমহলের একাধিক পাড়ায় পানীয় জলের উৎস নলকূপ অকেজো হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে আছে। ইলামবাজার পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব স্তরে আবেদন জানিয়েছেন বাসিন্দারা। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এ দিন ওই জঙ্গলমহলের আমখই গ্রামের বাসিন্দা মাতাল মুর্মু, শুকল মুর্মু, বিজয় মুর্মুরা বলেন, ‘‘বার কয়েক আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামের তিনটে নলকূপ সারানোর ব্যবস্থা হয়নি।’’ ওই গ্রামেরই সুখি মুর্মু, মুনি টুডুরা বলেন, ‘‘শুধু আমখই গ্রামেই নয়, পাশের গ্রাম জামবুনি, খয়েরডাঙার অবস্থাও একই। তাই ওঁদেরও গ্রামের জলের একমাত্র উৎস সাব-মার্সিবল পাম্পের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’’
এমন অবস্থায় আশপাশে চলছে আদিবাসীদের মেলা। বৈশাখের ১০ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এই মেলার জন্য আশপাশের এলাকা থেকে আত্মীয়স্বজনেরা এসে পড়েছেন ওই আদিবাসী মহল্লায়। নিজেদের আবার আত্মীয়দের জন্য জলের ব্যবস্থা কেমন হবে, তা নিয়েই চিন্তায় আমখই-সহ আশপাশের একাধিক আদিবাসী মহল্লা। কখনও তিন কিলোমিটার দূরে থাকা উষারডিহি থেকে তো আবার কখনও দ্বারোন্দা থেকে জলের ব্যবস্থা করছেন বাসিন্দারা। ইলামবাজারের তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান কৃষ্ণকান্ত হাজরা বলেন, “জঙ্গলমহলের আদিবাসী পাড়ায় জলকষ্ট রয়েছে। যা দাবদাহ চলছে, পুকুরঘাট সব শুকিয়ে কাঠ। ওই এলাকায় একাধিক নলকূপ রয়েছে। ওই নলকূপগুলি মেরামত করে দ্রুত গভীর নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
রক্ত-সঙ্কট মেটাতে। পরিস্থিতিটা এমনই হয়েছিল যে রক্ত নিতে হলে সঙ্গে করে রক্তদাতা নিয়ে আসা বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছিল। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের এই ‘রক্তশূন্য’ পরিস্থিতির কথা সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে আসার পরেই এগিয়ে এলেন বহু মানুষ। সোমবারই হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত দিলেন বাঁকুড়া থিয়েটার অ্যাকাডেমি এবং কোম্পানি ১ এনসিসি-র ৫৬ বেঙ্গল ব্যাটেলিয়নের ক্যাডেটরা। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুন্ডু বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্তশূন্যতার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে অনেকেই জরুরি ভিত্তিতে ক্যাম্প করতে চেয়ে ফোন করেছেন। এ দিন মোট ২৫ ইউনিট রক্ত দিয়েছেন এনসিসি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যেরা।’’ তিনি জানান, আজ মঙ্গলবারই বাঁকুড়া মেডিক্যালের থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্ত দেওয়ার দিন। তার আগে এই উদ্যোগের ফলে অনেক সুবিধা হল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এনসিসি-র কোম্পানি ১-এর অ্যাসোসিয়েট অফিসার তথা বাঁকুড়া থিয়েটার অ্যাকাডেমির সম্পাদক অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর দেখেই আমরা সরাসরি হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’