আটক করা কাঠ।—নিজস্ব চিত্র
বন দফতরের নাকের ডগা দিয়ে কাঠ বোঝাই লরি পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সরব হলেন জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘বনদফতরের একাংশের সঙ্গে পাচারকারীদের বোঝাপড়া রয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে আসছেন। সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের।’’
বুধবার সন্ধ্যায় হলধরবাবু এবং জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতির সদস্যা সুমিতা সিংহ মল্ল সূত্র মারফত খবর পেয়ে পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার ভাটবাঁধের অদূরে একটি কুষ্ঠ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে যান। সেখান থেকে কাঠ সমেত একটি লরিকে তাঁরা হাতেনাতে পাকড়াও করেন। হলধরবাবুর দাবি, বৈধ নথিপত্র দেখাতে না পারায় তাঁরা ওই লরিটিকে আটক করে বনদফতরে খবর দেন। সেই সময় লরির চালক তাঁদের টাকার প্রলোভন দেখায় বলে তাঁর অভিযোগ।
লরিটিকে আটক করে হলধরবাবু বনদফতরে খবর দেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুরুলিয়ার বিট অফিসার কাদল পাণ্ডে। তাঁর হাতে লরির চাবি তুলে দিয়ে হলধরবাবু এবং সুমিতাদেবী চলে যান। তার পরে এক দল লোক ওই আধিকারিককে হেনস্থা করে, তাঁকে লরির থেকে দূরে টেনে নিয়ে সেটিকে পালানোর সুযোগ করে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই আধিকারিক দাবি করেছিলেন, পালানোর পরে তিনি মোটরবাইক নিয়ে লরিটির পিছু ধাওয়া করেছিলেন। কিন্তু নাগাল পাননি।
হলধরবাবু জানান, কিছু দিন আগে হুড়া এলাকায় এ ভাবেই স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে খবর পেয়ে একটি কাঠ বোঝাই লরি আটক করেছিলেন তিনি। বৈধ নথিপত্র না থাকায় সেই লরিটিকেও বনদফতরের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটিও পালিয়ে যায় বলে পরে খবর পান। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘দফতরের বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একের পর এক শাল, মেহগনি গাছ কেটে পাচার হয়ে যাবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই, পুলিশ ও বনদফতর ওই গাড়িটিকে খুঁজে বের করুক। ঘটনার পিছনে কে বা কারা জড়িত তা-ও খুঁজে বের করা দরকার।’’ গাছ কাটা নিয়ে সাধারণ মানুষ ক্রমশ সচেতন হয়ে উঠলেও বনদফতর পাচার রুখতে ঢিলেমি করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে, এ দিন কংসাবতী (উত্তর) বনবিভাগের এডিএফও ব্যোমকেশ দত্ত, পুরুলিয়া-পাড়া রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক পুরুষোত্তম দোলুই এবং বিট অফিসার কাদল পান্ডে ওই কুষ্ঠ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এক প্রস্থ তদন্ত করেন। কেটে নিয়ে যাওয়া গাছগুলি এই প্রতিষ্ঠানের চৌহদ্দির মধ্যেই ছিল। ইতিমধ্যেই বন দফতরের অনুমতি না নিয়ে গাছগুলি কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। ব্যোমকেশবাবু বলেন, ‘‘দু’টি গাছ কাটা হয়েছে। অথচ তার জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে কেন গাছ কাটা হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের তরফে কিছু যুক্তি দেওয়া হয়েছে। তদন্তে যা উঠে এসেছে তার রিপোর্ট আমরা ডিএফওকে দেব।’’ কিন্তু খোদ বন দফতরের কর্মাধ্যক্ষই তো বন দফতরের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন। ব্যোমকেশবাবু বলেন, ‘‘গাড়িটি পালিয়ে গিয়েছে সেটা সত্যি। তবে চালক বিকল্প চাবি ব্যবহার করে চম্পট দিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, এই ঘটনার পিছনে দফতরের কর্মী সংকটও দায়ী। পাচারের খবর পেলে যত জন কর্মীকে ঘটনাস্থলে পাঠানোর দরকার হয়, তা দফতরে নেই। ফলে ঘটনাস্থলে যাওয়া কর্মীদের নিজেদেরই নিরাপত্তার অভাব দেখা দেয়। তিনি জানান, বুধাবার পাচারের খবর পেয়ে বীট অফিসার কাদলবাবুকে একাই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সেই সময় আরও কর্মী সেখানে উপস্থিত থাকলে গাড়িটিকে আটকানো যেতে পারত বলে তাঁর মত। পুলিশ জানিয়েছে, বন দফতরের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। গাড়িটিকে খোঁজ চলছে। কিন্তু, গাড়ির নম্বর-সহ অভিযোগ দায়ের করেছিল বনদফতর। তবু চব্বিশ ঘণ্টা পার করেও সেটিকে ধরা গেল না কেন, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তা নিয়েও।