West Bengal Panchayat Election 2023

অনুব্রত নেই বলেই কি ‘ছাপ’ বিরোধীর, চর্চা ভোটের ফল নিয়ে

পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলার প্রায় সব পঞ্চায়েতই দখল করেছিল তৃণমূল। হাতেগোনা এক-দু’টি পঞ্চায়েত গিয়েছিল বিরোধীদের দখলে।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ 

বোলপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩ ০৭:২৯
Share:

বোলপুর নিচুপট্টিতে শুনশান অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি মঙ্গলবার। ছবিঃ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

রাজ্যে পালাবদলের পরে অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে জেলায় প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখল বীরভূম। সেই ভোটে জেলা সভাপতির দেখানো পথেই হেঁটে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু, বেশ কিছু জায়গায় শাসককে ধাক্কাও দিয়েছে বিরোধীরা। বিজেপি তো বটেই, বাম-কংগ্রেস জোটও কিছু জায়গায় ভাল ফল করেছে।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলার প্রায় সব পঞ্চায়েতই দখল করেছিল তৃণমূল। হাতেগোনা এক-দু’টি পঞ্চায়েত গিয়েছিল বিরোধীদের দখলে। কিন্তু, এ বারের ফল বলছে, বিরোধীরা দাঁত ফোটাতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রেখেছে বিরোধীরা। বিজেপি-র দাবি, অন্তত ৭টি পঞ্চায়েত তাদের ঝুলিতে এসেছে।

অনুব্রত না-থাকাতেই কি বিরোধীদের এমন ফল, প্রশ্ন উঠেছে জেলার রাজনীতিতে। যদিও এ দিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “বিরোধীরা ভেবেছিল অনুব্রত মণ্ডল নেই, বীরভূম জেলা দখল করে নেব, কিন্তু তারা সেটি পারেনি। আমরা সবাই এক সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই সাফল্যের জায়গায় গিয়েছি।”

Advertisement

এই প্রথম অনুব্রত-হীন ভোট প্রসঙ্গে মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘তিনি না থাকলে একটা অসুবিধা হয়। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে আমরা টিম হিসেবে কাজ করতাম। সেই টিম হয়েই এ বারও কাজ করেছি। আমরা অনেকটাই পেরেছি। বলব না সবটাই পেরেছি, যার জন্য কয়েকটা পঞ্চায়েতে হেরেছি।’’ ভোট-পর্ব মিটতেই ফের জেলায় অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। চন্দ্রনাথ বলেন, “কর্মীদের উদ্দেশে বলব, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে।” মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বোলপুরে সাংসদ অসিত মাল, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ।

গতবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মহম্মদবাজার ব্লকের রামপুর পঞ্চায়েত এক বছর পর টসে জিতে তৃণমূল দখল করে। কিন্তু, এ বার সেখানে শুধু রামপুরই নয়, কাপিষ্ঠা ও আঙ্গারগরিয়া পঞ্চায়েতও বিজেপির দখলে এসেছে। ৮টি আসন বিশিষ্ট রামপুর পঞ্চায়েতে ৭টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূল পেয়েছে ১টি আসন। অন্য দিকে, ১০ আসনের কাপিষ্ঠ পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে ৬টি। তৃণমূল পেয়েছে ৪টি আসন। আঙ্গারগড়িয়া পঞ্চায়েতটিও সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজেপির দখল গিয়েছে। সেখানে ১২টি আসনের মধ্যে ৬টি আসন বিজেপি, ৫ তৃণমূল এবং ১টিতে সিপিএম জয়ী হয়েছে বলে খবর। সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েত এবং রামপুরহাট এক ব্লকের কাষ্ঠগড়া পঞ্চায়েতও বিজেপির দখলে। একই ভাবে খয়রাশোল ব্লকের ১৪ আসন বিশিষ্ট লোকপুর পঞ্চায়েতে ৮ আসন পেয়ে জয়ী হয়েছে বিজেপি। বাকি আসনে তৃণমূল ও নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সাঁইথিয়া ব্লকের দেরিয়াপুর পঞ্চায়েতও বিজেপির দখলে। সেখানে ৮ আসনের মধ্যে বিজেপি ৫ টি, তৃণমূল ৩ টি আসন পেয়েছে।

অন্য দিকে, নলহাটি দুই ব্লকের বারা ১ ও ২ পঞ্চায়েত দখল করেছে বাম-কংগ্রেস জোট। মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতও বিজেপি দখল করেছে। মুরারই ২ ব্লকের পাইকর ১ পঞ্চায়েত এবং নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতও তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বাম-কংগ্রেস।

এ ছাড়াও, জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন হলে এর থেকেও বেশি পঞ্চায়েত তাদের দখলে আসতো। বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল, “অনুব্রতহীন বীরভূমের সন্ত্রাস আজও অব্যাহত। কিন্তু, সংগঠনের জোরে আমরা বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত দখল করতে পেরেছি। সন্ত্রাস না হলে আরও অনেক পঞ্চায়েত পেতাম।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “অনুব্রতের থাকা বা না থাকায় তৃণমূল দলের চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম আরও কিছু পঞ্চায়েত আমাদের দখলে আসবে। সন্ত্রাসের কারণে তা হয়ে ওঠেনি।”

বেশ কিছু পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতছাড়া হওয়া প্রসঙ্গে এ দিন চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “২০১৮ সালে আমরা দুটো পঞ্চায়েত হেরেছিলাম। এ বার কিছু জায়গায় হয়তো আমাদের কর্মীরা ঠিক মতো কাজ করেনি। তাই মানুষ তাদের রায় দিয়েছে। আমরা খতিয়ে দেখব কেন হারলাম। এই সপ্তাহের মধ্যেই কোর কমিটি জেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এই নিয়ে পর্যালোচনা করবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement