আনোয়ারা বিবি।
হাসপাতালে রোগীদের ফল বিতরণ করেই তড়িঘড়ি মোটরবাইকে চেপে রওনা দিয়েছিলেন অন্য একটি সভায়। কিন্তু সেখানে আর পৌঁছনো হল না তৃণমূল নেত্রীর। মাঝ রাস্তায় উল্টে যায় তাঁদের মোটরবাইক। রাস্তায় জায়ের সঙ্গে ছিটকে পড়েন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে একটি ট্রাক এসে তাঁদের পিষে দেয়।
শনিবার সকালে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার কুম্ভস্থল মোড়ের কাছে, বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়কে এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ আনোয়ারা বিবি (৪২) ও তাঁর জা মঞ্জুরা বিবির (৩৫)। মোটরবাইকের চালক মঞ্জুরার ছেলে রাজু শেখ সামান্য চোট পেয়েছেন। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পরে মৃতদের গ্রাম রাউতখণ্ড পঞ্চায়েতের জামদিগরি গ্রাম থেকে পরিজন ও গ্রামবাসীরা সেখানে ছুটে আসেন। তাঁর দেহ দু’টি রাস্তাতে আটকে রেখেই অবরোধ শুরু করেন। তাঁরা ওই জায়গায় বাম্পার তৈরি ও মৃতদের পরিবারের লোককে চাকরি দেওয়ার দাবিতে ঘণ্টা দুয়েক অবরোধ চালান। পরে প্রশাসনের লোকজন ক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। রাজ্য সড়কে যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যাক্ষদশী সিরাজ খান, কুম্ভস্থলের বাপি সাউ, সুনীল দে জানান, তাঁদের চোখের সামনে দুর্ঘটনাটা ঘটে। তখন সকাল ১০টা বাজে। জয়পুরের দিক থেকে একটি মোটরবাইকে এক যুবক দুই মহিলাকে পিছনে বসিয়ে আসছিলেন। উল্টো দিকে কোতুলপুরের দিক থেকে একটি খালি ছ’চাকার ট্রাক জয়পুরের দিকে যাচ্ছিল।
ক্ষোভ: দুর্ঘটনার পরে বাঁকুড়ার জয়পুরে কুম্ভস্থল মোড়ে বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়ক অবরোধ।
কুম্ভস্থল মোড়টি দুর্ঘটনাপ্রবণ হওয়ায় পুলিশ সেখানে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য লোহার ব্যারিয়ার লাগিয়ে দিয়েছে। তাঁদের দাবি, ‘‘হঠাৎ ওই যুবক গাড়ির লোহার তৈরি ওই ব্যারিয়ারে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। দুই মহিলা রাস্তার মাঝখানে ছিটকে পড়েন। সেই সময়েই ট্রাকটি চলে আসে। ট্রাকের চাকায় দুই মহিলার মাথা পিষ্ট হয়ে যায়।’’ যদিও জয়পুর থানার দাবি, ‘‘স্পিড ব্যারিয়ারে ধাক্কা লাগেনি। মোটরবাইক চালক টাল সামলাতে না পারায় গাড়ি নিয়ে উল্টে পড়েন। যদিও গাড়ির চালক রাজুকে এ দিন কথা বলার অবস্থায় পাওয়া যায়নি। পুলিশ ট্রাকটি আটক করে ও চালককে গ্রেফতার করেছে।
স্থানীয় জনতা ও পুলিশ জানিয়েছে, মোটরবাইকের চালক ও আরোহী কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। যদিও মৃতদের কিছু পরিজনের দাবি, হেলমেট কলেও ট্রাকের চাকা তা গুঁড়িয়ে দিত। হেলমেট ছোটখাটো চোট থেকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু গাড়ির চাকার নীচ থেকে রক্ষা করবে কী করে?
জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নবকুমার রুইদাস বলেন, ‘‘সকালে আনোয়ারা বিবি জয়পুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে ফল বিতরণ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। রাউতখণ্ড পঞ্চায়েতে মহিলাদের নিয়ে একটি সভা আছে বলে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন। পরে দুর্ঘটনার খবর পাই। খুব খারাপ লাগছে।’’ তিনি জানান, আনোয়ারা বিবি সাধারণত বাসেই বেশি যাতায়াত করেন। কিন্তু মোটরবাইকে চড়ে এমন দুর্ঘটনায় পড়বেন কে জানত! এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদার বলেন, ‘‘পথ সচেতনতা নিয়ে সর্বত্র প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু সবাই সচেতন হচ্ছে এমনটা নয়। ওই এলাকায় শীঘ্রই হেলমেট নিয়ে সচেতনতায় আমি নিজে নামব।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, আনোয়ারা বিবি ও তাঁর স্বামী জালাউদ্দিন খান দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত। জীবনে প্রথমবার আনোয়ারা বিবি ভোটে জিতে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন। তাঁদের একটি ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। জামদিগরি গ্রামের বাসিন্দা নিমাই চন্দ্র, রিয়াজুল খান, নিজাম খানরা বলেন, ‘‘আনোয়ারা বিবি এলাকায় খুব জনপ্রিয় ছিলেন। রাত-বিরেতে বিপদে মানুষের পাশে তাঁকে পাওয়া যেত।’’ মঞ্জুরা বিবিও রাউতখণ্ড অঞ্চলের সক্রিয় তৃণমূল কর্মী ছিলেন। তাই এই দুর্ঘটনায় তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে তো বটেই, এলাকাতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
—নিজস্ব চিত্র