নানুরের দান্যপাড়া গ্রামে নির্বাচনী প্রচারে কাজল শেখ। সোমবার।ছবি: কল্যাণ আচার্য kalyan.aligram@gmail.com
তাঁদের দু'জনের ‘সম্পর্ক’ নিয়ে বিস্তর চর্চা রয়েছে শাসকদলে, এমনকি জেলার রাজনীতিতেও। দু’জনেই নানুরের বাসিন্দা। এক জনকে এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল টিকিট দেয়নি। অন্য জন, এ বারই প্রথম নির্বাচনী ময়দানে নেমেছেন। টিকিট না-পাওয়া সেই আব্দুল কেরিম খানকে ‘দলের সম্পদ’ বলে উল্লেখ করলেন তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের প্রার্থী কাজল শেখ।
সোমবার কেরিম খানেরই এলাকায় ভোট প্রচারে গিয়ে এ কথা বলেন কাজল। দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে, তবে কি কেরিমের ‘ক্ষোভ’ মেটানোর বার্তা দিতেই কাজল এমন মন্তব্য করেছেন? এমন চর্চারকারণও রয়েছে।
এ বার ভোটে প্রার্থিপদ না-পেয়ে বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন কেরিম। বলেছিলেন, ‘‘শুধু আমাকেই নয়, অনুব্রত-ঘনিষ্ঠদের অনেককেই টিকিট দেওয়া হয়নি। কেন হয়নি বলতে পারব না।’’ তাঁর দাবি ছিল, দলের নেতারা ‘ব্ল্যাকমেল’ করেছেন। টিকিট দেওয়া হবে না, সে কথা জানতে দেওয়া হয়নি।
তৃণমূলের অন্দরে কেরিম তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী এবং কাজলের বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবেই পরিচিত। অনুব্রত গরুপাচার মামলায় জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কেরিমই দলে বেশি গুরুত্ব পেয়ে এসেছেন। দু’বার জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হওয়ার সুবাদে কেরিমের প্রভাবও বাড়ছিল নানুরে।
অন্য দিকে, কাজলকে কার্যত ‘ব্রাত্য’ করে রেখেছিলেন অনুব্রত বলে অভিযোগ। গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে অনুব্রত জেলে যাওয়ার পরে অবশ্য এলাকায় কাজলের প্রভাব বাড়তে থাকে। জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজলকে জেলা কোর কমিটির সদস্য মনোনীত করেন। তার পর থেকেই দলে ক্রমাগত ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়েন কেরিম। দুই শিবিবের কোন্দলও সাম্প্রতিক কালে নানা ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে।
গরুপাচার কাণ্ডে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কেরিমকে একাধিক বার জেরা করেছে। সম্প্রতি জমি-দুর্নীতির অভিযোগেও কেরিমের নাম জড়ায়। তা জেনে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে পদ থেকে সরানোর নির্দেশও দেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই কারণেই এ বার কেরিমকে টিকিট দেয়নি দল। তাঁর জায়গায় জেলা প্রার্থী করা হয়েছে কাজলকে। সেই কেরিমেরই নিজের এলাকা, বাসাপাড়ায় এ দিন প্রচারে এসেছিলেন কাজল।
স্বভাবতই কেরিমের ভূমিকা নিয়ে কৌতুহল ছিল। এ দিনের প্রচারে পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ সভাপতি বুদ্ধদেব মেটে, পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য শেখ আলম, ভরত মাঝিকে দেখা গেলেও কেরিম খানকে দেখা যায়নি। দেখা যায়নি কেরিম-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় থুপসড়া পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান মীরমাখন আলিকেও।
স্বভাবতই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রশ্ন সামনে এসে পড়েছে। কাজল অবশ্য বলেন, ‘‘নানুরে আমাদের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। কেরিম খান আমার দাদার মতো। তিনি বিজেপি বা সিপিএমে চলে যাননি। দলেই আছেন। উনি দলের সম্পদ। খবর নিয়ে জেনেছি, আজ বাইরে আছেন। আগামী দিনে প্রচারে সামনের সারিতে তাঁকে দেখা যাবে।’’
এ দিন কেরিমকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁর ছেলে রিপন খান বলেন, ‘‘চিকিৎসাজনিত কারণে বাবা বাইরে আছেন।’’ অন্য দিকে, মীরমাখনের দাবি, ‘‘ভোট প্রচারের ব্যাপারে আমাদের জানানোই হয়নি।’’