আক্রান্ত: আব্দুল আহাদ শেখ। বোলপুরের হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
লাভপুরের দ্বারকা পঞ্চায়েত থেকে ঠিকাদারির কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা আব্দুল আহাদ শেখ (এলাকায় পরিচিত আহাদুর নামেও)। বৃহস্পতিবার ঘড়িতে তখন দুপুর আড়াইটে। লাভপুরের দরবারপুরে ঢোকার মুখে একটি বাম্পারের কাছে মোটরসাইকেলের গতি কম হতেই তাঁর দিকে পরপর দু’টি বোমা ছোড়ে কয়েক জন দুষ্কৃতী। বাঁ হাত ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় আহাদুরের। মোটরসাইকেলের পিছনে বসে থাকা তাঁর অনুগামী শেখ হামজাও আহত হন। হামলার পরই গা-ঢাকা দেয় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন শ্যাওড়াগোড়ের মোড়ে দ্বারকা পঞ্চায়েত অফিসে গিয়েছিলেন আহাদুর। তিনি তৃণমূলের দ্বারকা অঞ্চল কমিটির সদস্য তথা মীরবাঁধ বুথ কমিটির সভাপতি। পঞ্চায়েত অফিসে কাজ সেরে দুপুরে মীরবাঁধ গ্রামে বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। মাঝরাস্তায় হয় হামলা। গুরুতর জখম আহাদুরকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। পরে স্থানন্তরিত করা হয় বর্ধমানে। হামজার আঘাত গুরুতর না হওয়ার তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরই ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ দিনের ঘটনার পিছনে ময়ূরাক্ষীর বালির ঘাটের দখল ঘিরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ইঙ্গিত মিলেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ময়ূরাক্ষীর বালিঘাটের দখলদারি নিয়ে আহাদুরের সঙ্গে বিরোধ ছিল দরবারপুর গ্রামের শোয়েব আলি গোষ্ঠীর। শোয়ের আলি তৃণমূলের দরবারপুর বুথ কমিটির সভাপতি তথা ওই পঞ্চায়েতের অঞ্চল কমিটির সদস্য। গত বছর এপ্রিল মাসেও দরবারপুরেই বালিঘাটের দখল ঘিরে বোমা-গুলির লড়াই শুরু হয়েছিল। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দরবারপুর ও মীরবাঁধ গ্রাম। বোমা বিস্ফোরণে দরবারপুর গ্রামে ৯ জনের মৃত্যুও হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর মিলেছে, পঞ্চায়েতে ঠিকাদারির কাজ করতেন আহাদুর। বালিঘাট নিয়েও তাঁর সঙ্গে অন্য পক্ষের বিবাদ চলছিল।
এ দিন মীরবাঁধ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আহাদুরের বাড়িতে পাড়া-পড়শিদের ভিড় জমেছে। তবে সকলের মুখেই কুলুপ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অম্লানকুসুম ঘোষের নেতৃত্বে গ্রামে টহল দিচ্ছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। পিচরাস্তায় রক্তের দাগ তখনও স্পষ্ট। পাশেই পড়ে রয়েছে আহাদুরের মোটরসাইকেল। আহাদুরের এক ভাই শেখ সেন্টু বলেন, ‘‘দাদারা পঞ্চায়েত থেকে ফিরছিল। তখনই ওঁদের বোমা ছোড়ে। দাদা না ফেরা পর্যন্ত বলতে পারব না কারা এ কাজ করেছে।’’
তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও বালিঘাট নিয়ে বিরোধের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি ও সিপিএম যৌথ ভাবে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডল এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম অবশ্য তৃণমূলের ওই কথা একেবারেই মানতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, এ দিনের ঘটনার সঙ্গে তাঁদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই। হামলার পিছনে রয়েছে বালিঘাটের দখল নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তদন্ত শুরু হয়েছে।