এখনও জলদি আলুর বীজ জমিতে বসানো চলছে। সোনামুখীর কল্যাণপুরে। নিজস্ব চিত্র।
নতুন আলু মাঠ থেকে নভেম্বরেই বাঁকুড়ার বাজারে চলে আসে। তবে এ বার ডিসেম্বর মাস পড়ে গেলেও বাজারে নতুন আলুর দেখা নেই। আগামী ক’দিনের মধ্যেও বাজারে নতুন আলুর দেখা মিলবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ দিকে ভিন্ রাজ্যে আলু রফতানিতে রাজ্য সরকার কড়াকড়ি শুরু করায় ফের কর্মবিরতিতে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আলু ব্যবসায়ীরা।
এই পরিস্থিতিতে নতুন আলু সময়মতো বাজারজাত না করতে পারলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন। তবে বাঁকুড়া জেলার উপকৃষি অধিকর্তা দেবকুমার সরকার বলেন, “ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে জেলার বাজারে জলদি আলু দেখা যাবে বলে আমরা মনে করছি।”
বাঁকুড়া জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলায় প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে জলদি আলু চাষ হয়েছে। তবে দুর্গাপুজোর আগে ও পরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সময় মতো সেই চাষ শুরু করতে পারেননি আলুচাষিরা। সাধারণত সেপ্টেম্বরে এই আলু লাগানো হয়। নভেম্বরের শেষ দিকেই তা ধীরে ধীরে বাজারজাত হতে শুরু হয়। তবে এ বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে নভেম্বরে আলু লাগানো হয়েছে।
সোনামুখীর নবাসন পঞ্চায়েতের তেলরুই গ্রামের আলু চাষি নিতাই গরাঁই বলেন, “এ বার বৃষ্টির অভাবে ধান রোয়া পিছিয়ে গিয়েছিল। তাই ধান কাটতেও দেরি হয়েছে। যার ফলে জলদি আলু দেরিতে লাগিয়েছি। তাই এ বার নভেম্বরে আলু তোলা যাচ্ছে না। এ বার যা পরিস্থিতি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের আগে আলু বাজারজাত করতে পারব কি না নিশ্চয়তা নেই।’’ শনিবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আলু চাষিরা। বিষ্ণুপুরের মড়ার গ্রামের আলু চাষি নূর ইসলাম জানান, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণেই চাষে দেরি হয়েছে।
এ দিকে জলদি আলু উঠতে দেরি হওয়ায় পুরনো আলুর মজুত যাতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাজারে থাকে, তা নিশ্চিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। সে জন্য ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাজ্যের সীমানায় আলুর গাড়ি আটকে রাখা হচ্ছে। এতে বহু আলু নষ্ট হচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আলু ব্যবসায়ীরা।
গত অগস্টে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। সে বার আলু ব্যবসায়ীরা টানা প্রায় তিন দিন কর্মবিরতি করেছিল। বাজারে আলুর অভাবে দাম উল্টে বেড়ে যায়। তাই শনিবার আলু ব্যবসায়ীরা ফের কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা বিভাস দে বলেন, “জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জোগান দেওয়ার মতো আলু মজুত রয়েছে। কিছুটা অংশ বাইরে পাঠালেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে যে ভাবে গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে আমরা এর নিন্দা করছি।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “গোটা বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের নজরে রয়েছে। যেমন নির্দেশ দেওয়া হবে সে
মতো পদক্ষেপ করব।”