সাক্ষাৎ: শহরের পথে। নিজস্ব চিত্র
অদরকারি ‘যাত্রাভঙ্গ’ করতে শহরের রাস্তায় নেমেছেন প্রবীণ যাত্রাশিল্পী। যমরাজের বেশে বেপরোয়া লোকজনকে ধমকে-চমকে বাড়ি পাঠাচ্ছেন। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রঘুনাথসায়র এলাকার বছর পঁয়ষট্টির কৃষ্ণচন্দ্র লোহারের এই উদ্যোগ নজর কেড়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদেরও। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, “আমরা অনেক চেষ্টা করছি মানুষকে ঘরবন্দি রাখার। তবে সব ক্ষেত্রে যে সফল হচ্ছি, তা নয়। এই কাজে প্রবীণ শিল্পী এগিয়ে আসায় অনেক সুবিধা হল।”
জীবিকার জন্য রাজমিস্ত্রির কাজ করেন কৃষ্ণচন্দ্রবাবু। তবে ছোট থেকেই যাত্রাপালার প্রতি তাঁর টান। নানা ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। যমরাজের ‘পার্ট’ এই প্রথম। মঞ্চ থেকে নেমে চষে বেড়াচ্ছেন শহরের অলিগলি। তাঁর কথায়, “দেশে করোনা-পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। তবে মানুষ সচেতন না হলে এই রোগ কোথায় গিয়ে থামবে, কেউ জানে না। সে পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে জন্যই পথে নেমেছি।”
পুলিশ আর প্রশাসনের টানা প্রচারের পরেও, বিষ্ণুপুর শহরের কিছু এলাকা থেকে ‘লকডাউন’ ভাঙার খবর আসছে।
এই পরিস্থিতিতে বোলতলা, চকবাজার, বৈলাপাড়া, রসিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জের মতো জনবহুল এলাকা ঘুরে ঘুরে মানুষকে সচেতন করে চলেছেন কৃষ্ণচন্দ্রবাবু।
হাতের গদা উঁচিয়ে তেড়ে গিয়ে বলেছেন, ‘‘মাস্ক পরুন। ঘরে থাকুন। না হলে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে যাব সবাইকে।’’
বাজখাঁই গলার সেই হুঙ্কারে অনেকেরই গলা শুকোচ্ছে। কেউ কেউ আবার কৌতূহলে কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করছেন। আর ধমক খাচ্ছেন— ‘‘এটাকে মজা ভাববেন না। আপনাদের ভালর জন্য বলছি।”
শহরের শিল্পীরাও কৃষ্ণচন্দ্রবাবুর এই ভূমিকার তারিফ করছেন। বিষ্ণুপুর রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের তবলার শিক্ষক সুব্রত হাজরা বলেন, “পুলিশের লাঠি বা সচেতনতা প্রচার থাকলেও মানুষ বুঝছেন না ‘লকডাউন’-এর গুরুত্ব। চোখের সামনে যমরাজকে দেখে আশা করি টনক নড়বে।’’