Bishnupur

পর্যটকের আশা নিয়েই ট্যুরিস্ট লজ খুলছে

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, লজে ‘মাস্ক’ পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গোটা চত্বরে ‘স্যানিটাইজ়ার’ ছেটানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০১:২১
Share:

নতুন রূপে তৈরি বিষ্ণুপুরের ট্যুরিস্ট লজ। আশায় পর্যটন-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনও। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী

সরকারি নির্দেশ মেনে ৮ জুন খুলে যাচ্ছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজ। এই খবর সামনে আসার পরে আশার আলো দেখছেন মন্দির-নগরীর পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বলেন, “সরকারি নির্দেশ মেনেই লজ খোলা হচ্ছে। আধুনিক মানের সরকারি লজে যা নিরাপত্তা থাকা দরকার, সব থাকছে। বিষ্ণুপুর শহরে এখনও কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। পর্যটক এলে, অসুবিধে
হওয়ার কথা নয়।’’

Advertisement

বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজের ম্যানেজার দীনেশ হালদার জানান, সামাজিক দূরত্ব মেনেই রাখা হবে পর্যটকদের। আপাতত তাঁদের ঘরেই খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। তিনি বলেন, ‘‘অযথা জমায়েত যেমন করা যাবে না, তেমনই মন্দির দর্শনে যেতে হলে টোটো ঠিক করে দেওয়া হবে। তাতে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি যাত্রী থাকবেন না।’’

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, লজে ‘মাস্ক’ পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গোটা চত্বরে ‘স্যানিটাইজ়ার’ ছেটানো হয়েছে। পর্যটক আসার আগে ও যাওয়ার পরে, নিয়ম করে এ ভাবেই ঘরদোর জীবাণুমুক্ত করা হবে। লজের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট শুভাশিস বাউড়ি দাস জানান, ২৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের মধ্যে ১০-১২টি খোলা থাকবে।

Advertisement

২০১৮ সালের জুলাইয়ে বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজ সংস্কার শুরু হয়েছিল। এখনও বাইরের কিছু অংশে কাজ বাকি। তবে ২০১৯ সালের অক্টোবরে পর্যটকদের জন্য লজ খুলে দেওয়া হয়েছিল। আবার বন্ধ হয়ে যায় এ বছরের ২২ মার্চ, ‘লকডাউন’-এর জেরে।

সেখানে এখন ১২ জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন। অস্থায়ী কর্মী আরও ১২ জন। প্রায় আড়াই মাস পরে, লজ খোলার খবরে খুশি তাঁরা। বাপি ভান্ডারি, গণেশ লোহারের মতো কয়েকজন অস্থায়ী কর্মী বলেন, ‘‘লজ বন্ধ থাকার সময়েও আমরা মজুরি পেয়েছি। তবে বসে থাকতে ইচ্ছে করে না। আগের ছন্দে ফিরতে চাই।’’

বিষ্ণুপুরে শহরের বেশ কিছু মানুষ নির্ভর করেন পর্যটন শিল্পের উপরে। জোড়বাংলা মন্দিরের সামনেই পোড়ামাটি, কাঠ আর পাথরের টুকিটাকি জিনিস নিয়ে বসেন শ্যাম দাস। ‘লকডাউন’-এর আগেও মাসে হাজার পাঁচেক টাকা রোজগার হচ্ছিল। এখন এক বেলা খাবার জোগাড় করতেও হিমসিম খাচ্ছেন বলে জানান তিনি। রাজ দরবারের কাছে শ্যামকুণ্ডের পাড়েই তাঁর বাড়ি। শ্যাম বলেন, ‘‘মন্দির আর ট্যুরিস্ট লজ খুললে, আমরাও বাঁচার আশা দেখতে পাই। পর্যটকেরাও এ বার আশা করি আসতে শুরু করবেন।” তবে টেরাকোটার নানা জিনিসের বিক্রেতা পিন্টু দাসের আশঙ্কা, ‘‘পর্যটকেরা করোনার ভয় কাটিয়ে কতটা আসতে চাইবেন, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। তাঁরা না এলে আমাদের লাভ কোথায়?’’ বিষ্ণুপুরের প্রবীণ গাইড অচিন্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা কি আতঙ্ক নিয়ে মন্দিরে ঘুরতে আসবেন? যদি না আসেন, তা হলে সব কিছু চালু রেখেও বাঁচানো যাবে না বিষ্ণুপুরের হস্তশিল্পকে।”

তবে বেসরকারি লজ আপাতত খুলছে না বলেই জানা যাচ্ছে। বিষ্ণুপুরের লজ ও হোটেল মালিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক অসিতকুমার চন্দ্র বলেন, “আমাদের কাছে সরকারি কোনও নির্দেশ আসেনি। সরকার বললেও খোলা যাবে কি না, ভাবতে হবে। পর্যটক না এলে আমরা লজ বা হোটেল খুলে কী করব? পুজোর আগে পর্যটকেরা আসবেন কি না সন্দেহ আছে।’’ অসিতবাবুর প্রশ্ন, কোনও পর্যটক যে করোনা-আক্রান্ত নন, সেটা বোঝার মতো কোনও পরিকাঠামো তাঁদের নেই। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা যাতে আক্রান্ত না হন, সেটাও নিশ্চিত করা দরকার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement