ভোট প্রচারে ময়ূরেশ্বরের ঝর্ণা মণ্ডল। — ফাইল চিত্র।
নিজের মুখে কথা নেই। তবুও অন্যের মুখে প্রতিবাদের ভাষা ফোটাতে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছেন ঝর্না মণ্ডল। ময়ূরেশ্বরের কোটাসুরের বাসিন্দা বছর বাহান্নর ঝর্না জন্ম থেকেই কথা বলতে পারেন না। কানেও খুব কম শোনেন। তাঁকেই এ বারে সংশ্লিষ্ট কুণ্ডলা পঞ্চায়েতের ১৭৮ নম্বর সংসদে প্রার্থী করেছে সিপিএম।
ঝর্নার স্বামী পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল প্রান্তিক চাষি। ছেলে তোতন পুলিশকর্মী। মেয়ে প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মা বছর আশির পবিত্রবালাকে নিয়ে পূর্ণচন্দ্রের সংসার।
এর আগে ঝর্না কখনও ভোটে লড়েননি। তবে পূর্ণচন্দ্র এক বার সিপিআইয়ের সমর্থনে স্থানীয় কোটাসুর হাই স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক ছিলেন তিনি। এ বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে তাঁর স্ত্রীকেই প্রার্থী করেছে সিপিএম।
এখন তাঁদের দম ফেলার ফুরসৎ নেই। সকাল থেকে রান্না এবং বাড়ির কাজ সামলে দলের নেতাদের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন। ঝর্না বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাত জোড় করে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কেন ভোটে লড়তে নেমেছেন তিনি। যেখানে সমস্যা হচ্ছে, সেখানে স্বামী বা দলের নেতারা কথা জোগাচ্ছেন। বোঝাচ্ছেন তাঁদের কর্মসূচির কথা।
পূর্ণচন্দ্র বলেন, ‘‘বিপক্ষে তৃণমূল এবং বিজেপির প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের অর্থ এবং বাহুবল আছে। জানি লড়াইটা খুব শক্ত। তবুও প্রচারে গিয়ে মানুষের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে অনেকেই আমাদের পাশে দাঁড়াবেন।’’ ঝর্নার হাবভাবেও একই প্রতিক্রিয়া ফুটে উঠতে দেখা গিয়েছে।
বিরোধীরা অবশ্য তাঁকে প্রার্থী করায় সিপিএমের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সভাপতি আশিস মণ্ডল এবং বিজেপির মণ্ডল কমিটির সদস্য সদানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘এক জন বিশেষ ভাবে সক্ষম মহিলা ঝর্ণাদেবীর প্রতি আমাদের সহমর্মিতা রয়েছে। সিপিএম তাঁর প্রতিবন্ধকতা হাতিয়ার করে সহানুভূতির ভোট পেতে তাঁকে প্রার্থী করেছে। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যে সফল হবে না।’’
কিন্তু সিপিএমের ময়ূরেশ্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত ভল্লা বলেন, ‘‘সহানুভূতির ভোট কুড়োতে ওঁকে প্রার্থী করা হয়নি। সন্ত্রাসের কারণে মানুষের প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে গিয়েছে। প্রতিবাদের মুখ হিসেবে তুলে ধরতেই তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে।’’