যুদ্ধ: আগুন নেভানো। পুরুলিয়ায় শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
ব্যাঙ্কের ভিতর যে জ্বলছে, তা প্রথমে ঠাহরই করতে পারেননি কেউ। বন্ধ কাচের জানলার ফাঁক দিয়ে অল্প অল্প ধোঁয়া বেরোতে দেখে নীচের চায়ের দোকানের জটলা থেকে হইচই শুরু হতেই সময়ে দমকল কর্মীরা চলে আসায় বড়সড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেল পুরুলিয়া শহরের ভবতারণ সরকার রোডের একটি বহুতল। কিন্তু তার দোতলায় থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটি কার্যত পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
ব্যাঙ্কে আগুন লাগার খবরে আতঙ্কিত গ্রাহকেরা জড়ো হয়ে যান। তবে ব্যাঙ্কের তরফে দাবি করা হয়েছে, অনেক কিছু পড়ে গেলেও লকার ও স্ট্রংরুম অক্ষতই রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে ওই অগ্নিকাণ্ড।
দোতলায় ওই ব্যাঙ্ক ছাড়াও ডাক্তারের চেম্বার, জুতোর দোকান, বুটিকের দোকান প্রভৃতি রয়েছে। ওই বহুতলের নীচে রয়েছে চায়ের দোকান। সেখানে চা খেতে আসা পরিতোষ ঢাং, গৌতম চেল বলেন, ‘‘সকাল প্রায় সওয়া আটটা নাগাদ দেখি উপরে অল্প ধোঁয়া উড়ছে। প্রথমে তেমন আমল দিইনি। পরে দেখি গল গল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বুঝে যাই, দোতলার কোথাও আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে সবাইকে সতর্ক করে দিই।’’ তাঁরাই দমকল কেন্দ্রে খবর পাঠান।
ওই বহুতলের কাছেই পুরুলিয়া দমকল কেন্দ্র থাকায় কর্মীরাও দ্রুত ঘটনাস্থলে একটি ইঞ্জিন নিয়ে চলে আসেন। অনেকখানি এলাকা জুড়ে আগুন ছড়িয়ে বুঝে আরও দু’টি ইঞ্জিন নিয়ে আসেন দমকল কর্মীরা। তাঁরা মই বেয়ে দোতলায় উঠে জানলার কাচ ভেঙে ভিতরে উঁকি মেরে দেখেন, জিনিসপত্র পুড়ছে। আগুনের তেজে ভিতরে তাঁরা ঢুকতে পারেননি। বাইরে থেকে ব্যাঙ্কের ভিতরে জল ঢালা শুরু করেন তাঁরা। প্রায় সওয়া ঘণ্টার চেষ্টার পরে দমকল কর্মীরা আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনার পরে ভিতরে ঢোকেন। তারপরে ঘণ্টাখানেক চেষ্টায় তাঁরা সম্পূর্ণ ভাবে আগুন নেভান।
দমকল কেন্দ্রের ওসি সুদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগুন ভাল রকমই ছড়িয়ে পড়েছিল। আমাদের ১২ জন কর্মী তিনটি ইঞ্জিন নিয়ে আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনেন। মনে হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল।’’
এ দিকে ব্যাঙ্কে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাধারণ লোকজন তো বটেই, ছুটে আসেন আতঙ্কিত গ্রাহকেরাও। ব্যাঙ্কের কতটা কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে তাঁরা উদ্বেগের সঙ্গে খোঁজ করতে শুরু করেন। শহরের বাসিন্দা মণীশ সুলতানিয়া বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে টাকা জমা রয়েছে। তাই কতটা ক্ষতি হয়ে গেল, তা জানতে চলে আসি। ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, তেমন ক্ষতি হয়নি। তবুও উদ্বেগ ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না।’’ অভিযান ভট্টাচার্য নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার এক পরিচিত বেঙ্গালুরু গিয়েছেন। এই ব্যাঙ্কে তাঁর লকার ভাড়া নেওয়া রয়েছে। তিনি আগুনের খবর পেয়েই সেখান থেকে ফোন করে লকারের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইছেন।’’
আগুন নিভতে ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, ভিতরের আসবাবপত্র, কম্পিউটার, বাতানুকূল যন্ত্র-সহ অনেককিছুই পুড়ে গিয়েছে। ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রীতেশ কেশরী বলেন, ‘‘ঈশ্বরের কৃপাতেই বড় আগুন থেকে ব্যাঙ্ক রক্ষা পেয়েছে। ব্যাঙ্কের ভিতরে সাতটি কম্পিউটার, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র, আসবাবপত্র ও কিছু কাগজপত্র পুড়েছে। তবে লকার-সহ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলি সুরক্ষিত রয়েছে। গ্রাহকদের কোনও ক্ষতি হয়নি।’’ তাঁর আশ্বাস, দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি সামলে শীঘ্রই যাতে গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়া যায়, সে চেষ্টা চলছে। তিনি দাবি করেছেন, ফায়ার অ্যার্লাম বাজতেই সবাই সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন।