বিলি: বাসিন্দাদের দেওয়া হচ্ছে লিফলেট। বৃহস্পতিবার দেওয়ানগঞ্জে। ছবি: পাপাই বাগদি।
‘দয়া নয়, অধিকার চাই’। ‘কয়লা খনি নয়, জঙ্গল জনজীবনের উন্নয়ন চাই’। মহম্মদবাজারের কয়লা খনি এলাকায় এই দাবি তুলল ডেউচা-পাঁচামি আদিবাসী জনজাতি ভূমিরক্ষা কমিটি। শনিবার এই দাবির পক্ষে সভাও ডেকেছে কমিটি। সেই সভাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সকালে মিছিল করে দেওয়ানগঞ্জ গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে এই মর্মে ছাপানো লিফলেট তুলে দিতে দেখা যায় তাঁদের। লিফলেট বিলির সঙ্গে বাজে নাগারা।
কমিটির দাবি, মহম্মদবাজারের প্রস্তাবিত এলাকায় বেশ কিছু আদিবাসী গ্রাম রয়েছে। তার প্রত্যেকটি থেকে ১০-১২ জন করে বাসিন্দার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে ওই কমিটি। কমিটির পক্ষে সুনীল মুর্মু বলছেন, ‘‘আসলে এখানকার মানুষ কয়লা চাইছেন না। মানুষের দাবিকে আমরা সামনে নিয়ে আসতে চাই।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে হরিণশিঙার শিবতলা মাঠে জড়ো হয়েছিলেন কমিটির জনা ৫০ সদস্য। সেখান থেকে প্রায় তিরিশটি মোটরবাইকে প্রথমে হরিণশিঙায় গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে লিফলেট তুলে দিতে গেলে বাধা পান। গ্রামের কিছু আদিবাসী যুবক ভূমিরক্ষা কমিটিকে লিফলেট ছড়াতে বাধা দেন। খনি নিয়ে সমস্যা থাকলে নিজেরা সেটা বুঝবেন বলেও কমিটির সদস্যদের জানান।
আদিবাসী সংগঠন গাঁওতাও মনে করছে বিষয়টিকে এত গুরুত্ব দেওয়ার মতো কিছু হয়নি। সংগঠনের নেতা রবীন সরেন বলেন, ‘‘এমন কর্মসূচির কথা জানা ছিল না। যাঁরা এ দিন এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেই বাইরের গ্রাম থেকে। এলাকাবাসীর স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে কিছু হোক আমরাও চাই না। কিন্তু সেটা তো আলোচনা সাপেক্ষ। বাইরে থেকে অনেকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’’ একই মত স্থানীয় হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শিবদাস দাসেরও।
কিন্তু, বিষয়টিকে তত হালকা করে দেখতে চাইছেন না কেউ কেউ। ১৮ তারিখে কমিটির তরফে দেওয়ানগঞ্জে যে সভা ডাকা হয়েছে, সেখানে যোগ দেওয়ার কথা সেভ ডেমোক্রেসির সদস্যদের। উপস্থিত থাকার কথা সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, চঞ্চল চক্রবর্তীদের। যাঁরা প্রথম থেকেই নীতিগত ভাবে কয়লা খনির বিপক্ষে। অতীতে এলাকায় সভা করে এই বার্তাও দিয়েছেন। ওই সভার বিষয়টি ‘ফেসবুক পেজ’ থেকে প্রচারও করেছে জেলা সিপিএম। ইতিমধ্যে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাধা পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম ও বিজেপি প্রতিনিধি দল। এই নিয়ে রাজনীতির পারদ যখন চড়ে রয়েছে, তখন ১৮ তারিখের ওই সভা নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে অনেকের মত।
সেভ ডেমোক্রেসির প্রাক্তন সম্পাদক চঞ্চলবাবু বলছেন, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে রাষ্ট্রসঙ্ঘ জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে নির্ভরশীল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে নিষেধ করছে। তা হলে জমির এত নীচ থেকে কয়লা উত্তোলনের প্রয়োজনীয়তা কোথায়। জমি, জল জঙ্গলের মতো বাস্তু এবং জন্মগত মৌলিক অধিকার থেকে সরানোর যুক্ত কী?’’ সেভ ডেমোক্রেসির সদস্যরা জানান, এটাই স্থানীয় আদিবাসীদের বোঝানো হবে। আদিবাসীরা যদি রাজি না হন, তা হলেও জোর করে কিছু হবে না।
একই ভাবে জোর করে কিছু না করার কথা বলেছে প্রশাসন, সরকারও। তৃণমূলের নেতারাও বলছেন, ‘‘জোর করে কিছু হবে না। সকলের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই খনি হবে। ইতিমধ্যে প্যাকেজও ঘোষিত।’’ প্রতিক্রিয়া মিলেছে বিজেপিরও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, “এই বিষয়ে দল এখনও অবস্থান তৈরি করেনি। তবে বিরোধী দলনেতা হিসেবে আমার ওখানকার মূলবাসী-আদিবাসীদের প্রতি সমর্থন আছে। ভারত সরকারের অরণ্য আইনকে বীরভূমে ভাঙা হচ্ছে। কয়েক হাজার মূলবাসী আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে আলোচনা না করে, আবেগ, বসবাসের কথা বিবেচনা না করে যে পদ্ধতিতে সরকার অগ্রসর হচ্ছে, এটা সফল হবে না। কিছু স্বঘোষিত ভাতাজীবী, অভিনেতাকে নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। কমিটি তো করতে হবে সোরেন, হাঁসদাদের নিয়ে।”