বাজেয়াপ্ত: প্রায় ৯ হাজার সিমকার্ড ও অন্য সামগ্রী। নিজস্ব চিত্র।
ভুয়ো পরিচয়পত্র দিয়ে মোবাইলের সিম চালু করে ‘ই-ওয়ালেট’ বানিয়ে অবৈধ ভাবে টাকা লেনদেনের অভিযোগে ছ’জনকে গ্রেফতার করল বাঁকুড়া পুলিশ। বুধবার ধৃতদের বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে দুই ভাই, অভিষেক মণ্ডল ও অভিজিৎ মণ্ডল বাঁকুড়া সদর থানার ধোবাগ্রামের বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে রোহিত মণ্ডল বাঁকুড়া সদর থানার কুলমারা, অজিত মণ্ডল ছাতনার ভগবানপুর, রাজারাম বিশ্বাস ওন্দার সানতোড় ও রামপ্রসাদ দিগর কোতুলপুরের বাসিন্দা। ধৃতদের কাছ থেকে ৮,৮৮২টি সিমকার্ড, সাতটি পৃথক ব্যাঙ্কের পাসবই, ২৩টি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ, ১২৫ জন ব্যক্তির ছবি, ১১০ জনের পরিচয়পত্র, ১৫টি ডেবিট কার্ড ও নগদ দেড় লক্ষ টাকা-সহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “ভুয়ো পরিচয়পত্র, ছবি জোগাড় করে সিম চালু করত ধৃতেরা। পরে ওই নম্বরগুলি দিয়ে ‘ই-ওয়ালেট’ বানিয়ে টাকার বিনিময়ে অন্যকে ব্যবহার করতে দিত। এ ছাড়া, ভুয়ো ই-মেল বানিয়ে ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেলের ‘সাবস্ক্রাইবার’ হয়ে তাতে ‘পোস্ট’ করা বিষয়ে ‘লাইক’ করা হত। এতে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের মালিক বিজ্ঞাপন পেতেন।”
তবে ওই ‘ই-ওয়ালেট’গুলি কারা ব্যবহার করত, কী ভাবে সেগুলি থেকে টাকার আদান-প্রদান হত, গোটা ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা তদন্তে দেখছে পুলিশ। পুলিশ সুপার জানান, ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
কী ভাবে চক্রের হদিস মিলল? পুলিশ সূত্রে খবর, মোবাইল সিমের অবৈধ কারবার চালানোর অভিযোগে অভিষেক ও অভিজিৎকে প্রথমে আটক করে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় প্রচুর মোবাইলের সিম, পাসপোর্ট মাপের ছবি-সহ অন্য নথিপত্র।
পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ধৃত রামপ্রসাদ বিভিন্ন জনের ভোটার কার্ড, আধার ও ছবি জোগাড় করে দিত। রাজারাম ও অজিত মোবাইল সিমের ‘লট’ জোগান দিত। রোহিতের মাধ্যমে সে সব জিনিস অভিষেক ও অভিজিতের কাছে পৌঁছত। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, একটি সমাজ-মাধ্যমে গ্রুপ বানিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলত ধৃতেরা। মোবাইল নম্বরগুলি চালু হলে গ্রুপে জানিয়ে দেওয়া হত। ‘ই-ওয়ালেট’-এ টাকা আদান-প্রদানের জন্য আসা ‘ওটিপি’-ও ওই গ্রুপে জানিয়ে দেওয়া হত।
পুলিশ সুপার বলেন, “নানা অবৈধ কাজ, মানুষকে ঠকিয়ে টাকা তোলার মতো ঘটনায় ওই ই-ওয়ালেটগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সমাজ-মাধ্যমের ওই গ্রুপে কারা রয়েছেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”