মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দিঘায় জগন্নাথ ধাম তৈরির আবহে এ বার সৈকত শহরে মসজিদ নির্মাণের দাবিও উঠল। জগন্নাথ মন্দিরের কাজ দেখতে সংক্ষিপ্ত সফরে দিঘায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফিরে গিয়েছেন তিনি। জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওল্ড দিঘা বিশ্ব বাংলা পার্কের কাছে জমায়েত করেছিলেন হাজার খানিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এঁরা বেশিরভাগই রামনগর ১ ব্লকের দেউলিহাট এলাকার বাসিন্দা। মসজিদ নির্মাণের জন্য জমির দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তাঁদের প্রতিনিধিরা। তবে আগাম অনুমতি না থাকায় ফিরে যেতে হয় তাঁদের।
নিউ দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের দু’কিলোমিটারের মধ্যেই চড়ুইভাতি কমপ্লেক্সের কাছে সৈকতের গা ঘেঁষে মসজিদ তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। ওই মসজিদ নির্মাণে উদ্যোগী স্থানীয় ট্রাস্টের তরফে আব্দুল সামাদ বলেন, ‘‘দিঘায় স্থানীয় উদ্যোগে মসজিদ তৈরির কথা চলছিল। তবে বিষয়টি আর সে ভাবে এগোয়নি।’’ একটি সংখ্যালঘু সংগঠনের জেলা নেতা নজরুল ইসলামও বলছেন, ‘‘২০১২ সাল থেকে দিঘায় মসজিদ তৈরি চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল লোকজন। ’’
সূত্রের দাবি, এর আগে জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী যখন এসেছিলেন, তাঁকে মসজিদ তৈরির বিষয়টি জানানো হয়েছিল। মসজিদ নির্মাণে ২ একর ১১ ডেসিমেল জমি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ দেবে বলে ওই ট্রাস্টের দাবি। যদিও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘মসজিদের জন্য জমির বিষয়টি একেবারেই অজানা।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পর্ষদের নবনিযুক্ত এগজ়িকিউটিভ অফিসার অপূর্বকুমার বিশ্বাসও।
যদিও জগন্নাথ মন্দিরের ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কি আদৌ নির্দিষ্ট কোনও ধর্মস্থান তৈরি করতে পারে? প্রশাসনের যুক্তি, শুধু মন্দির নয়, এখানে জগন্নাথ ধাম ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে মন্দির তৈরি হতেই অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মস্থান তৈরির দাবিও জোরালো হচ্ছে। সূত্রের দাবি, বিজেপি প্রভাবিত একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে দিঘায় রামমন্দির এবং খ্রিস্টানদের তরফে একটি গির্জা তৈরির জন্যও ডিএসডিএ-তে লিখিত আবেদন জমা পড়েছে।
বিজেপির রাজ্য কমিটির নেতা তপন মাইতির কটাক্ষ, ‘‘দেশের আইনে সরকারি উদ্যোগে ধর্মস্থান গড়ে তোলার কথা লেখা নেই। তবু জনগণের টাকায় জগন্নাথ ধাম তৈরি করে অন্য ধর্মের লোকদেরও রাস্তা দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ মসজিদের বিষয়টি জানা নেই দাবি করে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরির মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নিয়ে চলেন। ভাগাভাগির রাজনীতি বিজেপি করে।’’