প্রতীকী ছবি।
ভরদুপুরে সেতুর উপর দিয়ে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দৌড়চ্ছে পাঁচ যুবক। তাড়া করছেন তিন জন পুলিশকর্মী। তাঁদের হাতেও আগ্নেয়াস্ত্র।
বেশ কিছুটা দৌড়নোর পরে পালানোর পথ নেই বুঝে যুবকদের মধ্যে দু’জন সেতু থেকে ঝাঁপ দিল আট ফুটের নীচের রাস্তায়। ঝাঁপ দিলেন যুবকদের ধরতে মরিয়া দুই পুলিশকর্মীও। এক যুবক এবং এক পুলিশকর্মী টাল সামলাতে না-পেরে পড়ে গেলেন নীচের রাস্তায়। পা থেকে ঝরল রক্ত। সেই অবস্থাতেই ফের দৌড় শুরু পুলিশকর্মীর। কিছুটা এগোনোর পরেই দুই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল দুই দুষ্কৃতী।
হলি-বলি-টলিউডের কোনও চলচ্ছবির দৃশ্য নয়। খাস কলকাতার বাস্তব। বুধবার বেলা ৩টে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে, কালীঘাট সেতুতে। পাঁচ দুষ্কৃতীর মধ্যে দু’জনকে ধরা গেলেও তিন জন পালিয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশ জানায়, ওই দিন দুপুরে গোপালনগর থেকে কালীঘাট সেতুতে ওঠার আগে তিন যুবক বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশের কাছে খবর ছিল, কাছাকাছি কোনও দোকানে ডাকাতির ছক কষেছে দুষ্কৃতীরা। ওই দুই যুবক সেই ডাকাতদলের সদস্য বলেই সন্দেহ হয় পুলিশের। তারা তক্কে তক্কে ছিল। কিছু পরে রাখালদাস আঢ্যি রোডের কাছে দুই যুবকের সঙ্গে যোগ দেয় তিন জন। সাদা পোশাকে, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চেতলা থানার তিন পুলিশকর্মী গোপালনগর মোড় থেকে ওই যুবকদের উপরে নজর রাখছিলেন।
আরও পড়ুন: ঘুম ভেঙে দেখি খোলা আলমারি, গয়না উধাও
বেলা আড়াইটে নাগাদ ফুটপাথ ধরে সেতুর দিকে এগোতে থাকেন ওই পুলিশকর্মীরা। ব্যবধান যখন মাত্র কয়েক মিটার, বিপদের গন্ধ পেয়ে ওই যুবকদের এক জন ‘পুলিশ পুলিশ’ বলে চেঁচিয়ে উঠেই দৌড়তে শুরু করে। পুলিশকর্মীরাও রাস্তা পেরিয়ে তাড়া করেন। ভরদুপুরে মহানগরীর রাস্তায় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পালাতে থাকা পাঁচ যুবকের পিছনে অস্ত্র নিয়ে পুলিশের দৌড়-দৃশ্য দেখে থমকে যান পথচারীরা। কিছুটা দৌড়নোর পরে যুবকেরা টের পায়, পুলিশ খুব কাছে এসে গিয়েছে। বাঁচতে হলে সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তখনই দুই দুষ্কৃতী সেতু থেকে ঝাঁপ দেয়। ডাকাত ফস্কে যাচ্ছে দেখে ঝাঁপ দেন দুই পুলিশকর্মীও। নীচের রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়েও হাল ছাড়েননি তাঁরা। আছাড় খাওয়ার ধাক্কা সামলে ফের দৌড়ে গিয়ে দু’জনকে ধরে ফেলেন পুলিশকর্মীরা। অন্য তিন জন যুবক ঝাঁপাঝাঁপির ঝুঁকি না-নিয়ে সেতুর উপর দিয়েই দৌড়তে থাকে। এক জন পুলিশকর্মী তাদের তাড়া করেও ধরতে পারেননি।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম অমিত রায় ও লাডলা মল্লিক। অমিত আলিপুর এবং লাডলা কালীঘাটের বাসিন্দা। তাদের কাছে পাইপগান, গুলি ও ভোজালি পাওয়া গিয়েছে। জেরার মুখে ধৃতেরা স্বীকার করেছে, তারা রাখালদাস আঢ্যি রোডের কাছে একটি কাঠগোলায় লুঠপাট চালাতে জড়ো হয়েছিল। দুষ্কৃতীরা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় সাদা পোশাকে থাকা সত্ত্বেও চেতলা থানার পুলিশকর্মীদের চিনে ফেলেছিল বলে তদন্তকারীদের অনুমান। ধৃতদের জেরা করে পলাতক তিন যুবককে ধরতে চাইছে পুলিশ।