বীরভূমের মিরিটির বাড়িতে দুর্গাপুজোয় প্রণব মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
‘মামাবাবু’ নেই— ভাবতেই পারছেন না প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির দীর্ঘদিনের গৃহকর্মী সাদেশ্বরী কোনাই। ৫৫ বছর ধরে ওই বাড়িতে কাজ করছেন তিনি। সোমবার সন্ধ্যায় মিরিটিতে প্রণববাবুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘প্রতি বার পুজোয় এসে ডেকে খোঁজখবর নিতেন, কেমন আছি। অসুস্থ হওয়ার খবর শোনার পর থেকেই দু’বেলা ঠাকুরকে ডেকেছি। ভাবতেই পারছি না, সেই মানুষটা আর নেই।’’
প্রণববাবুর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরেই এ দিন সন্ধ্যায় মিরিটি গ্রামের বাড়ির সামনে কয়েকশো লোকের ভিড় জমে যায়। ছোট ছোট জটলায় শুধুই প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মিরিটি সফরের স্মৃতিচারণা। ২৩ বছর প্রণববাবুর বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করেছেন গৌতম ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী রঞ্জুদেবী। বলছিলেন, ‘‘অসুস্থ হওয়া ইস্তক রোজ সংবাদমাধ্যমে তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর পেয়েছি। কিন্তু উনি যে চলে যাবেন, তা ভাবতে পারিনি।’’
মিরিটির সাধন ঘোষ, তুহিন ঘোষ, প্রিয়রঞ্জন ঘোষেরা জানালেন, প্রণববাবুর আসাকে ঘিরে দুর্গাপুজোর ক’দিন গ্রাম কী রকম জমজমাট হয়ে থাকত। সেই ব্যাপারটা
আর থাকবে না, ভেবেই কষ্ট হচ্ছে সকলের। বাড়ির দুর্গাপুজো উপলক্ষে প্রায় প্রতি বছর ষষ্ঠীর দিন চলে আসতেন প্রণববাবু। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন এই রুটিনে ছেদ পড়েনি বললেই চলে। কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাঠে যখন প্রণববাবুর হেলিকপ্টার নামত, হাজার হাজার মানুষ তাঁকে অভিবাদন জানানোর জন্য বাঁশের বেড়ার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতেন। প্রণববাবুও তাঁদের হাত নেড়ে অভিনন্দন জানিয়ে রওনা দিতেন পরোটা গ্রামে, দিদি অন্নপূর্ণাদেবীর বাড়ি অভিমুখে।
সেখানে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় মিরিটি যেতেন। গত বারও ওই বাড়ির সামনে এসে থেমেছে তাঁর কনভয়। কয়েক মাস আগে মৃত্যূ হয়েছে প্রণববাবুর দিদির। এ বার চলে গেলেন প্রণববাবু। মিরিটিতে প্রশ্ন, বাড়ির পুজোয় চণ্ডীপাঠ করবেন কে?