প্রতীকী ছবি।
কথায় বলে, ‘নো পেন, নো গেন’। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নে দলের অন্দরে সেই উপলব্ধিই উঠে এল সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের মুখে!
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তৃতায় জেলায় জেলায় কর্মসূচিতে ভাল সাড়া পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে পঞ্চায়েত ভোটে কোনও ভাবেই জমি না ছাড়ার কথা বলেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রস্তাব মেনে বামেরা যে প্রার্থী দিচ্ছে না, সেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্যাখ্যাও করে দেন রাজ্য সম্পাদক। দলীয় সূত্রের খবর, পরে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি জানাতে গিয়ে বিধানসভা উপনির্বাচনের কথা তোলেন মুর্শিদাবাদের জেলা সম্পাদক জ়ামির মোল্লা। বৈঠকে তিনি বলেন, সামনের বছর লোকসভা নির্বাচন। বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে একজোট করা জরুরি। জাতীয় ও রাজ্যের পরিস্থিতির বিচারে সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। সেই লক্ষ্যে বামেরা জেলায় কাজও করবে। কিন্তু জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনা করলে বামেদের জন্য এই সিদ্ধান্ত ‘যন্ত্রণাদায়ক’! ভবিষ্যতের স্বার্থে যন্ত্রণা সহ্য করেই তাঁরা জোট করছেন বলে মন্তব্য করেন জেলা সম্পাদক।
মুর্শিদাবাদ জেলায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সম্পর্ক বরাবরই দ্বন্দ্বমূলক। যে কারণে ২০১৬ ও ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্যে বাম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হলেও অধীর চৌধুরীর জেলায় একাধিক কেন্দ্রে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হয়েছিল! গত লোকসভা ভোটে সমঝোতা ছিল না। তবে অধীরের বহরমপুর আসনে প্রার্থী দেয়নি বামেরা। এখন সিপিএম ও কংগ্রেস উভয় শিবিরেরই মত, সাগরদিঘির উপনির্বাচনে সুষ্ঠু ভাবে ভোট হলে দু’পক্ষ একজোট হয়ে শাসক তৃণমূলকে চাপে ফেলার পরিস্থিতি আছে। আবার উল্টো দিক থেকে বাম শিবিরের অভ্যন্তরে আশঙ্কা, গত বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে ফল ভাল হলে লোকসভা ভোটের আগে ওই জেলায় কংগ্রেসের স্বর জোরালো হবে, যার জের সামলাতে হবে বামেদের! সেই সূত্র ধরেই রাজ্য কমিটিতে জামিরের ‘যন্ত্রণা’র কথা এসেছে বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
সিপিএমে এখন সদস্যপদ নবীকরণের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চলছে। সূত্রের খবর, ‘নিষ্ক্রিয়’ সদস্য চিহ্নিত করা গেলেও পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাঁদের ছেঁটে ফেলার ঝুঁকি নেওয়া যাচ্ছে না বলে বৈঠকে জানিয়েছেন একাধিক জেলার নেতৃত্ব। কলকাতায় হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত আজ, বুধবার রাজ্য কমিটিতে ব্যাখ্যা করার কথা দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রের। তার পরে সেলিমের জবাবি বক্তৃতা হয়ে বৈঠক শেষ হবে।