এক বধূকে ছ’মাসের বেশি সময় ধরে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামী, দুই ভাসুর ও দেওর সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার বিকেলে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ভক্তিনগর থানায় এই অভিযোগ করেছেন সেই মহিলা। শিলিগুড়ির ইস্কন মন্দির রোডের আশরফনগরের বাসিন্দা ওই মহিলার অভিযোগ, তাঁর শাশুড়ি এবং জা-ও এই ঘটনায় মদত দিয়েছেন। পুলিশ তাঁর শাশুড়ি, জা ও এক ভাসুরকে গ্রেফতার করেছে। অন্যরা পলাতক। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “গণধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে। বধূ নির্যাতনের ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। পলাতক অভিযুক্তদের ধরার জন্য সব রকম চেষ্টা হচ্ছে।”
দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির বাসিন্দা ওই তরুণী এমএ পাশ করে একটি বহুজাতিক পানীয় সংস্থায় চাকরির সূত্রে শিলিগুড়িতে থাকতেন। সেই সময়ে তাঁর পরিচয় হয় শিলিগুড়ির একটি মোবাইল বিক্রি ও মেরামতির দোকানের মালিক মহম্মদ দিলওয়ারের সঙ্গে। সেই সূত্রে প্রেম ও বিয়ে। গত ১ নভেম্বর তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তাঁকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তার পরপরই তাঁকে জোর করে ভাসুর ও দেওরদের সঙ্গে সহবাস করতে বাধ্য করে দিলওয়ার। পুলিশ জানায়, ওই বধূর দুই ভাসুর মুস্তাক হুসেন ও মহম্মদ জাহিদ, দেওর সাদ্দাম হুসেন ও তাঁদের জামাইবাবু মহম্মদ কামাল এই ঘটনায় অভিযুক্ত। বধূর অভিযোগ, তাঁর শ্বশুরবাড়ির প্রশ্রয়ে দিলওয়ারের অনেক বন্ধুও তাঁকে ধর্ষণ করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ ও অত্যাচারের ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু সকলে তাঁর উপরে নজর রাখত। তাই বাড়ি থেকে পালাতে পারেননি। বুধবার সুযোগ পেয়ে পালিয়ে স্থানীয় আশরফনগর আঞ্জুমান আশরফিয়া কমিটির সম্পাদক মহম্মদ ইলিয়াসের কাছে গিয়ে সমস্ত জানান। তিনি দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের দ্বারস্থ হন। সেই সঙ্গেই স্থানীয় কাউন্সিলর কংগ্রেসের শর্মিলা শর্মাকেও সব কথা জানানো হয়। বৃহস্পতিবার ওই তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তারপরে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি নিজেই। লিগাল এড ফোরামের জেলা সম্পাদক অমিত সরকার জানান, ওই বধূর হয়ে তাঁরা মামলা লড়বেন। শিলিগুড়ি হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ পারশ নাথ বলেন, “রোগিণীর আপাতত কোনও সঙ্কট নেই। তবে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।” লিগাল এড ফোরামের তরফে ওই তরুণীর পরিবারের লোকজনদের খবর দেওয়া হয়েছে।
আশরফনগরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে দিলওয়ারদের তেমন সদ্ভাব নেই। দিলওয়ার বাড়িতেই মোবাইলের দোকান চালায়। তার বাবা প্রতিবন্ধী। দিলওয়াররা চার ভাই-ই বেশি দূর পড়াশোনা করেনি। প্রতিবেশীরা জানান, দিলওয়ারদের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগও উঠেছিল আগে।