বাইরে দাঁড়িয়ে আলু বোঝাই গাড়ি। মঙ্গলবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
স্থানীয় শ্রমিকদের কাজ দিতে হবে, এই দাবি জানিয়ে দু’দিন ধরে একটি হিমঘরের যাবতীয় কাজকর্ম বন্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করেন, আন্দোলনের নেতারা তাঁদের কেউ নন। দ্রুত হিমঘর খোলানোর আশ্বাসও দিয়েছেন তাঁরা।
সোমবার থেকে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির ওই হিমঘরের সামনে মাচা বেঁধে অবস্থান করছে আন্দোলনকারীরা। কোনও হিমঘর কর্মী ভিতরে ঢুকতে পারছেন না। দ্রুত দাবি মানা না হলে এলাকার অন্য হিমঘরের সামনেও এই রকম আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন ইনটাক। এলাকার সব ক’টি হিমঘরে আলু রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। হিমঘর মালিকদের সংগঠন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাতে জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের দ্বারস্থ। ওয়েস্ট বেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক প্রদীপ প্রসাদ বলেন, “শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে আগে কোনওদিন সমস্যা হয়নি। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের একাংশ যে ভাবে আন্দোলন করছেন তাতে হিমঘরে আলু রাখার কাজে বিঘ্ন ঘটছে। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বপন দাস। তিনি নিজেকে আইএনটিটিইউসি-এর জেলা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দাবি করেছেন। স্বপনবাবু বলেন, “ওই হিমঘরে স্থানীয় শ্রমিকরা কাজ পান না। স্থানীয়দের কাজের সুযোগ দিতে হবে। সেই দাবিতে অবস্থা-অবরোধ চলছে। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” তবে অন্য কোনও হিমঘরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই বলে স্বপনবাবুর দাবি। আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন অবশ্য স্বপনবাবুর নেতৃত্বের হিমঘর অচল করার ঘটনার সমালোচনা করেন। দোলার বক্তব্য, “আমাদের সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক পদ নেই। উনি আমাদের সংগঠনের কেউ নন। কাজ অচল করে দাবি আদায় আমাদের সংগঠনের নীতি নয়। আন্দোলন সমর্থন করি না। দ্রুত হিমঘর খোলানোর চেষ্টা করব।” উত্তরবঙ্গে আলু উৎপাদনের অন্যতম এলাকা ধূপগুড়ি। কৃষকদের আলু মজুত রাখার জন্য এলাকায় ৯টি হিমঘর রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে জমি থেকে আলু তুলতে শুরু করেছেন কৃষকরা। মার্চের গোড়া থেকে হিমঘরে আলু রাখার কাজ শুরু হয়েছে। আলু রাখার কাজ চলে মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত। এ বার আলু রাখার কাজ যথারীতি শুরু হয়।
কিন্তু, সোমবার নিজেদের দলের শ্রমিকদের দিয়ে কাজ দেওয়ার দাবি করে তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। তিনটি হিমঘর মালিক পক্ষ বিবাদে না জড়িয়ে হিমঘর বন্ধ করে দেন। তবে ডাউকিমারি রোডের হিমঘর মালিক বন্ধ করতে রাজি হননি। এর পরেই ৩টি ট্রাক্টর বোঝাই আলু হিমঘর চত্বরে আটকে অবরোধে বসে তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন। হিমঘরের মালিক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা স্বপন দাসের নির্দেশে হিমঘর অচল করা হয়। জেলার প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের দিয়ে আমরা ১১ বছর ধরে কাজ করাই। তিনি যাদের স্থানীয় শ্রমিক হিসাবে দেখাচ্ছেন, তারা কেউ প্রশিক্ষিত নন।” এর পরে কল্যাণবাবুর দাবি, “আমরাও ডানপন্থী পরিবারের সদস্য। কিন্তু, বাম জমানায় এমন সমস্যা হয়নি।”