‘বন্ধু বিগ্রহ’দের সঙ্গে দোল মদনমোহনের

আবির খেললেন মদনমোহন। কোচবিহার রাসমেলার মাঠে প্রথা মেনে শুক্রবার রাতে ‘দোল সওয়ারি’ উত্‌সব উপলক্ষে মদনমোহনের আবির খেলার আয়োজন হয়েছিল। রাসমেলার মাঠে ওই উত্‌সবে রাজমাতা, ডাংগোরাই মন্দিরের মদনমোহন বিগ্রহের সঙ্গে হাজির করানো হয় রাজাদের কুলদেবতার বিভিন্ন ‘বন্ধু’ বিগ্রহদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

মদনমোহন মন্দিরের বিভিন্ন বিগ্রহ নিয়ে রাসমেলার মাঠে দোল সওয়ারি উত্‌সব কোচবিহারে। শুক্রবার রাতে হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

আবির খেললেন মদনমোহন। কোচবিহার রাসমেলার মাঠে প্রথা মেনে শুক্রবার রাতে ‘দোল সওয়ারি’ উত্‌সব উপলক্ষে মদনমোহনের আবির খেলার আয়োজন হয়েছিল।

Advertisement

রাসমেলার মাঠে ওই উত্‌সবে রাজমাতা, ডাংগোরাই মন্দিরের মদনমোহন বিগ্রহের সঙ্গে হাজির করানো হয় রাজাদের কুলদেবতার বিভিন্ন ‘বন্ধু’ বিগ্রহদের। বাণেশ্বরের চলন্তি মহাদেব, ষাণ্ডেশ্বর মন্দিরের শিব, নিউটাউনের গোপীনাথ, মূল মদনমোহন মন্দিরের দীনদয়াল ও দীনগোবিন্দ কে নেই সেই উত্‌সবে! শোভাযাত্রা করে ভক্তদের কাঁধে সওয়ারি হয়ে সেখানে সমস্ত বিগ্রহ পৌঁছয়। রীতিমেনে পুজোর পর বিগ্রহের উদ্দেশে প্রথম আবির দেন রাজ পরিবারের প্রতিনিধি হিসাবে দুয়ারবক্সি পরিবারের সদস্য অজয় দেববক্সি। অজয়বাবুর দাদা অমিয় দেববক্সি চিকিত্‌সা সংক্রান্ত কারণে কলকাতায় থাকায় ওই পরিবারের সদস্য হিসাবে অজয়বাবু এবার দায়িত্ব পালন করেন। তারপর বিগ্রহের পায়ে আবির দিতে অপেক্ষমান ভক্তদের হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।

দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য তথা কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “প্রাচীন রীতি মেনে দোলকেন্দ্রিক ওই অনুষ্ঠানে কোনও খামতি রাখা হয়নি।”

Advertisement

ইতিহাস গবেষক দেবব্রত চাকি জানিয়েছেন, শ্রীকৃষ্ণের ১০৮টি নামের সূত্র ধরে বিভিন্ন মন্দিরের একক মদনমোহন বিগ্রহের সঙ্গে তাঁর বন্ধু দেবতারা আবির খেলেন। এটাই রাজ আমলের পরম্পরা। বন্ধুদের নিয়ে মদনমোহন দেব দোলের পরদিন আবির খেলেন। প্রচলিত ওই বিশ্বাসের জন্য কোচবিহারেও আবির খেলা হয় দোলের পরদিন। দেবোত্তর ট্রাষ্ট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ আমল থেকেই কোচবিহারের দোল উত্‌সবের মূল আকর্ষণ রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন স্বয়ং। দোল সওয়ারি উত্‌সব বাসিন্দাদের কাছে ‘বন্ধু’দের নিয়ে মদনমোহনের আবির খেলা হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। দোল উত্‌সবের আগের দিন বুধবার অনুষ্ঠিত বহ্নু উত্‌সবের আকর্ষণও কম ছিল না। ওই দিন সন্ধ্যায় শোভাযাত্রা করে তিনটি মন্দিরের বিগ্রহ পালকি চেপে হাজির করান হয় রাসমেলার মাঠে। রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন বিগ্রহ, ডাংগোরাই ও রাজমাতা মন্দিরের বিগ্রহ একই ভাবে পৌঁছয় রাসমেলার মাঠে। তিনটি মন্দিরের বিগ্রহের পুজো হয় তারপর খড়ের তৈরি ‘বুড়িঘর’ পুড়িয়ে সূচনা হয় বহ্নু উত্‌সবের।

এক সময়ে, উত্‌সবের আনন্দ উপভোগে প্রাসাদ ছেড়ে নিজে মোটরগাড়ি চালিয়ে রাসমেলার মাঠ লাগোয়া এলাকায় আসতেন খোদ মহারাজা। রাজাদের আমল থেকে বহ্নু উসবের বুড়িঘরে ব্যবহৃত বাঁশ সংগ্রহেও অভিনবত্ব রয়েছে। বিশ্বাস অনুযায়ী, ওই বাঁশ ঘরে রাখলে অগ্নিকান্ড হবে না ধরা হয়। এমন বিশ্বাসের জেরেই তা সংগ্রহ করতে ফি বছর এমন আগ্রহ দেখা যায় বাসিন্দাদের মধ্যে। রাজ পরিবারের দুয়ারবক্সি অমিয় দেববক্সি বলেন, “ষাটের দশকে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ বুড়িঘরের ওই বাঁশ নিয়ে হড়োহুড়ি নিজে দেখেছিলেন। রাজা, রাজ্য না থাকলেও কোন প্রথা নিয়ে আগ্রহ কমেনি। তবে এবার দোলের কোনও উত্‌সবে আমার থাকা হলনা বলে নিজেরই খারাপ লাগছে।”

দোলের দিন থেকে পঞ্চম দোল পর্যন্ত মূল মন্দিরের বারান্দায় সেখানকার মদনমোহন বিগ্রহ রাখা হয়। এবারেও গত বুধবার থেকে ভক্তরা মূল মন্দিরের বারান্দায় ওই বিগ্রহ দর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন। দেবোত্তরের এক কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী জানান, “সওয়ারি উত্‌সবে রাজাদের আমলের অন্য দুটি মন্দিরের মদনমোহন বিগ্রহ মধ্যমণি হিসাবে রাখা হয়। এবারেও ওই রীতির হেরফের হয়নি। সন্ধ্যা থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে মন্দির, মেলার মাঠে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement