হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও আতঙ্ক কাটছে না মালদহের রতুয়ার মতিগঞ্জের দশম শ্রেণির ছাত্রীর। তাই ফরিদা যাতে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন।
শনিবার দুপুরে ফরিদার বাড়িতে গিয়ে ফের তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ওই আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদার বাড়িতে যাওয়ার পরে তাঁকে উত্ত্যক্ত করায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নিজেই পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ডিস্ট্র্রিক্ট চাইল্ড অফিসার অরুনায়ণ শর্মা। তার পর শনিবার জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে নিয়ে ফের ফরিদার বাড়িতে যান রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও নীলাঞ্জন তরফদার। তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এ দিন ফের ফরিদার বাড়িতে গিয়েছিলাম।”
পুলিশ-প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে পাশে দাঁড়ানোয় আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন ছাত্রী ও তাঁর পরিবার। ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় অভিযুক্ত মিনহাজুল হককে শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করার পর চাঁচল মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে দেন। সোমবার ফের তাঁকে বিশেষ আদালতে পেশ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। মালদহের জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, “প্রশাসনের তরফে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেয়েটির বাড়িতে থাকলে সমস্যা হতে পারে ভেবে তাঁকে যাতে হস্টেলে রাখা যায়, সেই চেষ্টাও করছি।”মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেন, “অভিযুক্তকে গ্রেফতারের ওই ছাত্রীর যাতে সমস্যা না হয়, সেদিকেও পুলিশ নজর রাখছে।”
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছর জুলাইয়ে ওই কিশোরীকে অপহরণ করেছিল তাঁর খুড়তুতো ভাই। দু’সপ্তাহ বাদে পুলিশ তাঁকে হাবরা থেকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় খুড়তুতো ভাই মিনহাজুল ও কাকা আব্দুর রফিক গ্রেফতারও হন। তার পর থেকে কাকার পরিবারের পাশাপাশি খুড়তুতো ভাই মিনহাজুলও ক্রমাগত তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে।
বুধবার মালদহ টাউন হলে সিনি-র (চাইল্ড ইন নিড) উদ্যোগে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক একটি সেমিনারে নিজের বিপন্নতার কথা জানিয়ে সরব হয়েছিল দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। সে জানায়, তাকে ক্রমাগত বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। রাজি না হওয়ায় প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। একাধিকবার হামলাও করা হয়েছে। পর দিন রাতে তার বাড়িতে যান প্রশাসনের কর্তারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে তদন্তের পর রাতেই রতুয়া থানায় মিনহাজুলের নামে অভিযোগ জানানো হয়। এ দিন ফের তার বাড়িতে যান প্রশাসনের কর্তারা। সেখানে সে জানায়, বাড়িতে থেকে পড়শোনা করতে তার অস্বস্তি হচ্ছে। এর পরেই তাকে হস্টেলে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি তার উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় খরচও প্রশাসন বহন করবে বলে জানানো হয়েছে।
সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজাও বিষয়টি জানেন। আগামী মাসে মালদহে এসে ওই ছাত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী দেখা করতে পারেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিশোরীর বাবা মৌলবি। দুই ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সব চেয়ে ছোট ওই ছাত্রীর এবার আলিম (মাধ্যমিক সমতুল) পরীক্ষায় বসার কথা। কিশোরীর বাবা বলেন, “প্রশাসন পাশে দাঁড়ানোয় ভরসা পেয়েছি। মেয়ে যা চাইবে তাই হবে।” কিশোরী জানায়, “কাকা ও তার পরিবার চায় আমি খুড়তুতো ভাইকে বিয়ে করি। কিন্তু আমি পড়তে চাই।”
ধৃতের বাবা আব্দুর রফিক অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের কেউ অপহরণে জড়িত ছিলাম না। জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে ফাঁসানো হচ্ছে।”